ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন সেনার অনুপ্রবেশ, নিশ্চুপ পিয়ংইয়ং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৩

সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন এক মার্কিন সেনা। উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার সুরক্ষিত সীমান্ত অতিক্রম করে তিনি উত্তর কোরিয়ার সীমানায় পৌঁছেছেন। তবে এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করায় ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে। কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে,২৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন প্রাইভেট সেকেন্ড ক্লাস পদমর্যাদার মার্কিন সেনা সদস্য। তার নাম ট্র্যাভিস কিং।

আরও পড়ুন: শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে ৫ ধাপ উন্নতি বাংলাদেশের

টুইটারে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আমরা ধারণা করছি তিনি বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হেফাজতে আছেন এবং এই ঘটনার সমাধানে আমরা কোরিয়ান পিপলস আর্মির (কেপিএ) সাথে কাজ করছি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলছে যে, তারা তাদের সেনা আটকের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন এবং তারা এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, ট্র্যাভিস কিং সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কারাগারে আটক ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এজন্য এক সপ্তাহ আগে তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রেস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার বিমানে ওঠেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেন বিমানবন্দরের কাস্টমস থেকেই হঠাৎ গায়েব হয়ে যান এই সেনা সদস্য। তিনি কোনোভাবে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়ায় (জেএসএ) সীমান্ত সফরে যোগ দেন। ওই এলাকাটি বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ওই সফরের সময়ই সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি। এরপর থেকে তার সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ হয়নি।

কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যেই এই সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়টি সামনে এলো।

কোরীয় উপদ্বীপে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বাড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য এই ঘটনা সমস্যা তৈরি করতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার কারাগারে সাধারণত মার্কিন বন্দীদের সাথে নৃশংস আচরণ করা হয়। ২০১৮ সালে, উত্তর কোরিয়া এক মার্কিন কলেজ ছাত্রকে মুক্তি দেয়। তিনি একটি হোটেল থেকে ব্যানার চুরির জন্য বন্দী হয়েছিলেন। তিনি কোমায় থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং পরে মারা যান।

১৯৯৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকবার মার্কিন নাগরিকদের আটক করেছে। তাদের মধ্যে পর্যটক, বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক ছিলেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মার্কিন সরকার তাদের নাগরিকদের উত্তর কোরিয়ায় যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সিবিএসকে বলেন, ওই সেনা কর্মকর্তা ‌‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। এর পেছনে কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। এক প্রত্যক্ষদর্শী ওই মার্কিন নাগরিকের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনাটি জানিয়েছেন।

jagonews24.com

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই ব্যক্তি তাদের ৪৩ জনের ট্যুর গ্রুপের একজন সদস্য ছিলেন। সীমান্তে পৌঁছাতেই তিনি কিছু ভবনের মধ্যে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের দিকে দৌঁড়ে যান এবং জোরে হাসতে থাকেন। তিনি বলেন, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো রসিকতা করছেন। কিন্তু যখন তিনি আর ফিরে আসেননি, আমি বুঝতে পারলাম এটি নিছক কোন রসিকতা ছিল না এবং তারপরে সবাই এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

তবে তিনি যখন সীমান্ত পার হচ্ছিলেন তখন ওইপারে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের দেখা যায়নি বলে জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী। ১৯৫৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়ান যুদ্ধের অবসান হয়েছিল। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের সেনা মোতায়েন রেখেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ হাজার আমেরিকান সেনা মোতায়েন রয়েছে। এটি জাপান এবং জার্মানির পরে আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশী সামরিক উপস্থিতি। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।

আরও পড়ুন: গ্রেফতার আতঙ্কে ট্রাম্প

সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এটি একটি নিরাপত্তা জোটের অংশ যা ৫০’র দশকে কোরিয়ান যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তৈরি হয়েছিল। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অংশীদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে। কারণ যুদ্ধবিরতি যুদ্ধ বন্ধ করলেও কোরিয়ান যুদ্ধ আসলে শেষ হয়নি।

উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর মিত্রদের মধ্যে বিরোধের অবসানে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া। কারণ তারা একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা পরীক্ষা করে যাচ্ছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বিকাশের জন্য কাজ করছে।

টিটিএন