প্রমোদতরী থেকে বাইচের নৌকা, বিশ্বের বৃহত্তম যত নৌযান
প্রাচীন আমলে শুধু নয় এখনো বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে ভ্রমণের প্রিয় বাহন হচ্ছে জাহাজ। তাই জাহাজ নির্মাণ সংস্থাগুলোও তৈরি করছে বিশাল আকারের সব জাহাজ। আসুন আজ এরকম কিছু জাহাজ ও নৌযান সম্পর্কে মজাদার কিছু তথ্য জেনে নিই।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী:
বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ হলো ‘আইকন অব দ্য সিজ’। রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন এ প্রমোদতরী লম্বায় এক হাজার ২০০ ফুট ও ওজন দুই লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। অর্থাৎ, চারটি ফুলটবল মাঠের সমান এ জাহাজ।
এ জাহাজে রয়েছে বিশাল ওয়াটারপার্ক ও ছয়টি রেকর্ড ব্রেকিং ওয়াটার স্লাইড। থাকবে সাতটি পুল ও নয়টি জলের ঘূর্ণি। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ নির্মাতা মায়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে আইকন অব দ্য সিস। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২৬ অক্টোবর রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের বহরে যোগ দেবে জাহাজটি।
আইকন অব দ্য সিজ গত ২২ জুন সমুদ্রে প্রথম দফা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এ সময় শতাধিক মাইল সমুদ্রপথ ভ্রমণ করেছে এটি। পরীক্ষা করা হয়েছে জাহাজটির প্রধান ইঞ্জিন, ব্রেক সিস্টেম, স্টিয়ারিং, শব্দ ও কম্পনের মাত্রা।
বিশ্বের প্রথম এলএনজি চালিত জাহাজটিতে ব্যবহার হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তাছাড়া এটিতে রয়েছে খাবার, পানশালা এবং বিনোদনের ৪০ রকমের রসদ রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলিই ক্রুজ ভাড়ার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত।
এতে রয়েছে ২০ রকমের ডেক। প্রাপ্তবয়স্কদের সময় কাটানোর জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ জায়গা। সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি দলবদ্ধ ভ্রমণকারীদের জন্য আরও ২৮ রকমের বন্দোবস্ত রয়েছে এ জাহাজে।
জানা গেছে, জাহাজটিতে সাত রাতের ক্যারিবিয়ান ট্রিপের জন্য জনপ্রতি টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য শুরু হবে ৭৩১ ডলার থেকে। বড়দিনের সময় জাহাজের ফ্যামিলি টাউন হাউস সুইটে থাকলে গুনতে হবে ৮৫ হাজার ডলার। আগামী জানুয়ারি থেকে আইকন অব দ্য সিস যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি থেকে পূর্ব-পশ্চিম ক্যারিবিয়ানের গন্তব্যে ছুটবে।
সবচেয়ে বড় কন্টেইনার জাহাজ
এ ধরনের জাহাজ হলো কার্গো বা পণ্যবহনকারী জাহাজ, যা মূলত স্টিলের কন্টেইনার বহন করে। প্রমোদতরীর মতো এটাতে বিশালবহুল সব ব্যবস্থা না থাকলেও, এ ধরনের জাহাজ সম্ভাব্যভাবেই অনেক বেশি কার্যকর। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সিংগভাগই এ ধরনের জাহাজের ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে সর্ববৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ হলো ‘এমএসসি লরেটো’। ২২ তলা ভবনের সমান বিশাল এ জাহাজের দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার বা ১৩১২ ফুট, যা একটি যুদ্ধ জাহাজের চেয়েও বড়। এটির ডেকের আয়তন প্রায় ৪টি ফুটবল মাঠের সমান। কার্গোর গভীরতা ৩৩ দশমিক ২ মিটার। এটিতে একবারে ২৪ হাজার কনটেইনারে বা ২ দশমিক ৪ লাখ টন পণ্য বহন করা যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইয়ট
‘আজাম’ হলো বিশ্বের বড় ইয়ট, যেটি ১৮০ দশমিক ৬৫ মিটার বা ৫৯২ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাশবহুল ইয়টও বলা হয় এটিকে। ৬০ কোটি ডলার মূল্যের এ নৌযানটির মালিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
এটিতে দুটি গ্যাস টারবাইন ও দুটি ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে। ফলে ইয়টটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ নট বা (ভূমিতে ৩৪ প্রতি ঘণ্টায় মাইলের সমান) গতিতে চলতে পারে। বিশ্বের দীর্ঘতম এ ইয়টে ৩৬ জন অতিথি ও ৮০ জন ক্রু থাকতে পারেন। এটিতে রয়েছে স্পা, পুল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গল্ফ খেলার মতো অত্যাধুনিক সব সুবিধা।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের মালিকাধীন সবচেয়ে বড় জাহাজ
‘এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ’ হলো ব্রিটিশ রাজ পরিবারের মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় জাহাজ, যা মূলত একটি বিমানবাহী রণতরী। তিনটি ফুটবল মাঠের সমান বড় এ রণতরী ৪০টি বিমানসহ ও কমপক্ষে ২০টি বড় আকারের যানবাহন বহন করতে সক্ষম। এটির নামকরণ করা হয়েছে ব্রিটেনের রানী প্রথম এলিজাবেথের নামানুসারে।
জাহাজটির ওজন ৬৫ হাজার টন, যা প্রায় ১৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক হাতির সমান। এটিতে পাঁচটি জিম, একটি প্রার্থনালয় ও একটি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।
দীর্ঘতম ড্রাগন বোট
২০১৯ সালে ৮৭ দশমিক ৩ মিটার বা প্রায় ২৮৭ ফুট দীর্ঘ ড্রাগন বোট বা বাইচের নৌকা বানিয়ে রেকর্ড গড়ে কম্বোডিয়া। নৌকাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যাচু অব লিবার্টির উচ্চতার প্রায় সমান।
ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালের উৎপত্তি চীনে। এটি এমন একটি উৎসব যা শুধু চীন নয় বরং এশিয়াজুড়েই প্রচলিত। অনুমান করা হয়, এ উৎসব পালন করা হচ্ছে দুই হাজারেরও বেশি সময় ধরে ও এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম উৎসবগুলোর একটি।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ