ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

এশিয়াতেও হাত বাড়াচ্ছে ন্যাটো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ১১ জুলাই ২০২৩

ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে রাশিয়ার প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়ায় জড়ো হয়েছেন সারা পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। বাল্টিক সাগরের পাশে ছোট্ট এই সাবেক সোভিয়েত দেশের রাজধানী ভিলনিয়াসে দু’দিন ধরে চলবে পশ্চিমা এই সামরিক জোটের বৈঠক।

ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে দ্রুত এই জোটের সদস্য করা বা না করার বিষয়টিই মুখ্য বিষয় হবে এবারের সম্মেলনে। সেই সঙ্গে, জোটের কোনো দেশ রুশ হামলার শিকার হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে প্রস্তাবিত একটি কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও পশ্চিমা সামরিক জোটের এজেন্ডায় রয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের চারটি দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক এক কাঠামো তৈরি। এ কারণে ভিলনিয়াসে হাজির থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স।

আরও পড়ুন>> সুইডেনকে ন্যাটোতে নিতে হলে তুরস্ককে ইইউতে নিতে হবে: এরদোয়ান

জোটের সদস্য না হয়েও এই চারটি দেশ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। গত বছর মাদ্রিদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তাদের অংশগ্রহণের পর থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে, স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে গড়া এই পশ্চিমা সামরিক জোট কি এখন এশিয়াতেও পা রাখতে চাইছে?

গত জানুয়ারিতে জাপানে গিয়ে ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ টোকিওতে জোটের একটি লিয়াজোঁ অফিস খোলার বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন– এমন খবর ফাঁস হওয়ার পর সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। এবার টানা দ্বিতীয়বার জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ এই মিত্রদের অংশগ্রহণ সেই সন্দেহকে শতগুণে বাড়িয়ে দেবে।

ভিলনিয়াস সম্মেলনে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ন্যাটোর একটি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা কাঠামো গৃহীত হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়ুন>> গোপন নথিতে গুমর ফাঁস: ইউক্রেনে লড়ছে পশ্চিমাদের বিশেষ বাহিনীও

jagonews24মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনে জাপান, দ. কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা। ছবি সংগৃহীত

সহযোগিতার পরিধি কতদূর
জানা গেছে, এই চারটি দেশ আলাদাভাবে তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ন্যাটোর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করতে চলেছে। এই চুক্তির নাম হতে পারে আইটিপিপি (ইনডিভিজুয়ালি টেইলরড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম)।

নিক্কেইসহ জাপানের একাধিক নির্ভরযোগ্য মিডিয়া গত সপ্তাহে জানিয়েছে, ন্যাটোর সঙ্গে আইটিপিপি চুক্তির খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলেছে টোকিও ও ক্যানবেরা। সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে নিক্কেই বলেছে, জাপান ও ন্যাটোর মধ্যে সহযোগিতার ১৬টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠিয়ে কি ঠিক করলো ন্যাটো সদস্যরা?

দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডও ন্যাটোর সঙ্গে বেশ কিছুদিন আলোচনা চালিয়েছে। তবে তাদের চুক্তিগুলো ভিলনিয়াসের শীর্ষ সম্মেলনের আগে চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, এই চারটি দেশের সঙ্গে ন্যাটো জোটের সহযোগিতার প্রধান যে ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, মহাকাশে নিরাপত্তা এবং যেসব ডিজিটাল প্রযুক্তি সাইবার জগতে হুমকি তৈরি করতে পারে, যেমন এআই।

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে যে, ন্যাটো বাহিনী এবং এই চারটি দেশের সামরিক বাহিনী নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়াবে, যাতে প্রয়োজনে তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে যৌথভাবে কাজ করতে পারে।

jagonews24এ বছর টোকিও সফরকালে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর পাশে ন্যাটো মহাসচিব স্টলটেনবার্গ। ছবি সংগৃহীত

ন্যাটোর নজর এশিয়ায় কেন
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউজের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কর্মসূচির গবেষক বিল হেইটন সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, এশিয়ায় ন্যাটো জোটের নজর নতুন কিছু নয়। এই চারটি দেশ ও ন্যাটোর মধ্যে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা চলছে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বে ইসাফ বাহিনীতে সৈন্য পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইসাফকে নানা ধরনের লজিস্টিক সাহায্য জুগিয়েছে জাপানের নৌবাহিনীও।

আরও পড়ুন>> অবশেষে ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড, মেনে নিলো তুরস্ক

এছাড়া, ২০০৯ সাল থেকে পূর্ব আফ্রিকা উপকূলের কাছে জলদস্যু মোকাবিলায় ন্যাটোর নৌ তৎপরতায় অংশ নিয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই চারটি দেশ।

এরপর ২০১৬ সালে এই সহযোগিতা কিছুটা আনুষ্ঠানিক রূপ পায়, যখন ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে এই চার দেশের সঙ্গে জোটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক হয়। ন্যাটো তখন বলেছিল, ওই দেশগুলো চেয়েছে বলেই বৈঠকটি হয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে আতঙ্কিত দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। তবে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নজরের প্রধান কারণ এখন চীন।

মাদ্রিদে গত বছরের ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত কৌশলপত্রে প্রথমবারের মতো সরাসরি চীনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল। ওই কৌশলপত্র ঘোষণা করার সময় ন্যাটো মহাসচিব খোলাখুলি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রসহ সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে চীন এবং ন্যাটো জোট এখন চীনা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।

তারা (চীন) প্রতিবেশীদের ক্রমাগত হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, তাইওয়ানকে হুমকি দিচ্ছে। তারা এখন আর্কটিকে, তারা আফ্রিকায়... ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষে মিথ্যা প্রচারণা ছড়াচ্ছে... চীন এখনো অমাদের শত্রু দেশ নয়। কিন্তু যেসব মারাত্মক চ্যালেজ্ঞ তারা খাড়া করেছে তা আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে, বলেন ন্যাটো মহাসচিব।

আরও পড়ুন>> এশিয়ার ইউক্রেন হবে তাইওয়ান?

jagonews24চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি সংগৃহীত

ক্রোধে ফুঁসছে চীন
বৈরী প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর এই দহরম মহরম সম্পর্কে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত চীন। বেইজিং মনে করছে, তাদের কোণঠাসা করতে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো জোটকে এশিয়ায় সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

গত বছর ন্যাটো সম্মেলনের পরপরই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রিকস জোটের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে দেওয়া ভাষণে বলেন, কিছু দেশ চূড়ান্ত নিরাপত্তার ধোঁয়া তুলে এশিয়ায় সামরিক জোট বিস্তৃত করতে চায়। তারা জোটে জোটে সংঘাত তৈরিতে উসকানি দিচ্ছে, বিভিন্ন দেশকে জবরদস্তি করে দলে ঢোকানোর চেষ্টা করছে, যেন একচ্ছত্র আধিপত্য টিকিয়ে রাখা যায়।

আরও পড়ুন>> ন্যাটো জোট পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে: রাশিয়া

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই প্রবণতা চলতে থাকলে বিশ্বে অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে।

ন্যাটো কি সত্যিই এশিয়ায় পা রাখছে?
এশিয়ায় কি অদূর ভবিষ্যতে ন্যাটো সৈন্য মোতায়েন করতে দেখা যাবে? চ্যাটাম হাউজের গবেষক বিল হেইটন তা মনে করেন না। তার ধারণা, খুব শিগগির এশিয়ার কোনো দেশ ন্যাটো জোটের সদস্য হবে বা এশিয়ার কোনো দেশকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেবে, সেই সম্ভাবনা নেই।

‘কিন্তু ন্যাটো সদস্যরা এশিয়ার সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করে চীন ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রহী।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/