দাঙ্গার আগুনে জ্বলছে ফ্রান্স, জরুরি অবস্থা জারির জন্য চাপ
ফ্রান্সে তৃতীয় রাতের মতো মারাত্মক দাঙ্গা, লুটপাট ও সহিংসতার পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয়শর বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্যারিস উপকণ্ঠে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার পর দেশটিতে এই দাঙ্গা শুরু হয়।
গত রাতে গোলমালের সময় প্যারিসে বহু দোকানপাট লুট হয়, অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উত্তরাঞ্চলীয় খোঁবে শহরে একটি হোটেলে আগুন দেওয়ায় সেখানকার অতিথিদের রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে।
দাঙ্গা মোকাবেলায় এরই মধ্যে ফ্রান্সজুড়ে ৪০ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ।
আরও পড়ুন>> ১৭ বছরের কিশোরকে পুলিশের গুলি, প্রতিবাদে উত্তাল ফ্রান্স
গত মঙ্গলবার আলজেরীয় ও মরোক্কান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
যে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নাহেল মারা গেছেন, তিনি তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত খুনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
নাহেলের মৃত্যু ফ্রান্সে বর্ণবাদ ও সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে ক্ষোভ উসকে দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ফ্রান্স।
আরও পড়ুন>> ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা, লুটপাট
গত বৃহস্পতিবার নাহেলের মায়ের নেতৃত্বে যে শোক মিছিল বেরিয়েছিল, সেখানেও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
প্যারিসে কড়া পুলিশি পাহারা সত্ত্বেও বহু দোকানপাট লুট হয়েছে। রাস্তায় অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ন'টার পর হতেই প্যারিস এবং বৃহত্তর অঞ্চলে সব বাস এবং ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। প্যারিসের কোন কোন উপশহরে কারফিউ জারি করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, ১৭ বছর বয়সী নাহেলের মৃত্যুতে যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারেন। তবে এই সহিংসতা কোনো যুক্তিতেই মানা যায় না।
আরও পড়ুন>> ১৭ সেকেন্ডে এক বোতল বিয়ার শেষ, সমালোচনার মুখে ম্যাক্রোঁ
নাহেলের মৃত্যুর পর ফ্রান্সে পুলিশের ক্ষমতা এবং প্যারিসের উপশহরগুলোর মানুষের সঙ্গে এই বাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। উপশহরগুলোতে যারা থাকেন, তারা অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন।
জরুরি অবস্থা জারির জন্য চাপ
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ শুক্রবার তার মন্ত্রিসভার যে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন, সেটি সংকট মোকাবিলায় গত কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন যেভাবে হিমশিম খাচ্ছে, তাতে ডানপন্থি ও কট্টর ডানপন্থি দলগুলো জরুরি অবস্থা জারির জন্য সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে।
ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করলে কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ক্ষমতা পায়। এই ক্ষমতাবলে সরকার কারফিউ জারি করতে পারে এবং সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে জরুরি অবস্থা তখনই জারি করা হয়, যখন দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো হুমকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন>> ফ্রান্সে ছুরি নিয়ে হামলায় শিশুসহ আহত ৭
তৃতীয় রাতের দাঙ্গার পর প্যারিস এবং অন্যান্য শহরে যে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির দাবি আরও জোরালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ধরনের বিক্ষোভ দমনে ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের আমলে। এরপর ২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেও ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। সেটি জারি ছিল দু’বছর।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/