ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

টাইটান ট্র্যাজেডি

সাবমেরিনে থাকারই কথা ছিল না সুলেমানের, ‘অতি আগ্রহে’ গেলো প্রাণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ২৯ জুন ২০২৩

আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে সম্প্রতি নিখোঁজ হয়েছে ছোট্ট সাবমেরিন টাইটান। এর পাঁচ আরোহীর মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ এবং তার ছেলে সুলেমানও। দুর্ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চললো, আজও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের। সাবমেরিনের সঙ্গে সলিল সমাধি হয়েছে হয়তো বাবা-ছেলেরও। অথচ ভয়ংকর ওই ট্রাজেডিতে থাকারই কথা ছিল না ১৯ বছর বয়সী সুলেমানের।

শাহজাদার স্ত্রী ও সুলেমানের মা ক্রিস্টিন দাউদ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে জানিয়েছেন, সমুদ্রতলের ওই অভিযানে মূলত তিনি এবং তার স্বামীর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছেলের ‘অত্যাধিক আগ্রহ’ থাকায় শেষপর্যন্ত পিছিয়ে যান মা।

আরও পড়ুন>> সাবমেরিন নিখোঁজ: রোবটচালিত জলযান নামিয়েও মেলেনি সন্ধান

ক্রিস্টিন জানান, তারা টাইটানে চড়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বহুদিন আগে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির বাধায় পিছিয়ে যায় সেই সফর। এই অভিযানে তখন ক্রিস্টিন ও শাহজাদার যাওয়ার কথা ছিল। কারণ, সুলেমানের বয়স ছিল তখনো কম।

jagonews24

ক্রিস্টিন দাউদ বলেন, এরপর আমি পিছিয়ে যাই এবং সুলেমানকে সুযোগ করে দেই। কারণ সে খুব করে যেতে চাচ্ছিল।

তিনি বলেন, আমি তাদের জন্য সত্যিই খুশি ছিলাম। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ওরা দুজনেই এটি করতে চেয়েছিল।

মায়ের জায়গায় ছেলে গিয়ে প্রাণ হারানোর বিষয়ে কেমন অনুভব করেন- এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি সুলেমানের মা।

আরও পড়ুন>> সতর্ক করার পরও কেন গভীর সমুদ্রে যাত্রা করেছিল টাইটান?

তিনি জানান, সুলেমান রুবিকস কিউবে আসক্ত ছিল। মাত্র ১২ সেকেন্ডেই এর ধাঁধাঁ সমাধান করতে পারতো সে। টাইটানে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে রুবিকস কিউব নিয়ে গিয়েছিল ছেলেটি।

ক্রিস্টিন বলেন, সুলেমান রুবিকস কিউব না নিয়ে কোথাও যেতো না। সে বলেছিল, আমি ৩ হাজার ৭০০ মিটার পানির নিচে টাইটানিকে গিয়ে রুবিকস কিউব সমাধান করবো।

ইউটিউব ভিডিও দেখে রুবিকস কিউব সমাধান করা শিখেছিল এ কিশোর। মায়ের ভাষ্যমতে, এটি নিয়ে সে খুবই উতলা ছিল।

jagonews24

এদিন স্বামীর প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন ক্রিস্টিন। জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়। আর পৃথিবী সম্পর্কে শাহজাদার আগ্রহ এত বেশি ছিল যে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ডকুমেন্টারি দেখতে বসে যেতেন তিনি। তার উত্তেজনা ছিল শিশুসুলভ, বলেন স্ত্রী।

আরও পড়ুন>> ২০১৯ সালে প্লেন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেও এবার রক্ষা হলো না

ক্রিস্টিন ও তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে অ্যালিনাকে যখন জানানো হয়, কর্মীরা টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন- সেই মুহূর্তের কথাও স্মরণ করেন এ নারী। তিনি বলেন, আমি তখন বুঝতে পারিনি যে এর অর্থ কী।

ক্রিস্টিন বলেন, সবাই ভেবেছিল সাবমেরিনটি আবার ওপরে আসবে। অনেক আশা ছিল। কিন্তু মনে হয়, ৯৬ ঘণ্টার সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আমি আশা হারিয়ে ফেলি।

এখন কী হবে?
ক্রিস্টিন জানান, যা ঘটেছে তার আঘাত মা-মেয়ে কোনোদিন ভুলতে পারবেন বলে মনে হয় না। তবে ক্রিস্টিন ও অ্যালিনা শপথ করেছেন, তারা রুবিকস কিউব সমাধান করা শিখবেন। ‘আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, সুলেমানের জন্য এটি শিখবো,’ বলেন ক্রিস্টিন।

jagonews24

এছাড়া শাহজাদা দাউদের কাজও চালিয়ে যাবে পরিবারটি। স্ত্রীর ভাষ্যমতে, তিনি অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, অনেক লোককে সাহায্য করেছেন। আমি সেগুলো চালিয়ে যেতে চাই এবং তাকে সেই প্ল্যাটফর্ম দিতে চাই… এটি আমার মেয়ের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন>> সাবমেরিন টাইটানের ৫ টুকরো শনাক্ত: মার্কিন কোস্টগার্ড

স্বামী-সন্তান হারানো এ নারী বলেন, আমি তাদের মিস করি। সত্যি খুব মিস করি।

শাহজাদার দাদার হাতে গড়া দাউদ হারকিউলিস করপোরেশন পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। বিদ্যুৎ, পেট্রোকেমিক্যাল, সার, তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য ও কৃষির মতো খাতগুলোতে বিশাল ব্যবসা রয়েছে তাদের।

গত ১৮ জুন আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয় টাইটান। আশঙ্কা করা হচ্ছে, টাইটানিকের কাছাকাছি গিয়ে কোনো কারণে দুর্ঘটনার কবলে পর্যটকবাহী সাবমেরিনটি। এতে শাহজাদা ও সুলেমানের পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন ওশানগেট সিইও স্টকটন রাশ, টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পল-হেনরি নারজিওলেট, ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হামিশ হার্ডিং।

সূত্র: সিএনএন, বিবিসি
কেএএ/