গভীর আমাজনে কীভাবে ৪০ দিন বেঁচে ছিল হারিয়ে যাওয়া ৪ শিশু?
আমাজনে প্লেন বিধ্বস্তের পর নিখোঁজ হওয়া চার শিশুকে ৪০ দিন পর অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে সারাবিশ্বে। সবার মনেই প্রশ্ন- হিংস্র আর বিষাক্ত প্রাণীতে ভরা গভীর জঙ্গলে এতদিন কীভাবে টিকে ছিল তারা? খেয়েছিল কী? কীভাবে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি সামাল দিলো ছোট ছোট চার শিশু?
গত ১ মে আমাজনের কলম্বিয়া অংশে বিধ্বস্ত হয় একটি ছোট প্লেন। এতে প্রাপ্তবয়স্ক তিন আরোহী নিহত হন এবং নিখোঁজ হয় চার শিশু। তাদের সবচেয়ে বড়জনের বয়স মাত্র ১৩ বছর। বাকিদের বয়স নয় বছর, চার বছর ও ১২ মাস মাত্র। নিহতদের মধ্যে শিশুদের মা-ও ছিলেন।
আরও পড়ুন>> দু’সপ্তাহ নয়, ৪০ দিন পর উদ্ধার হলো আমাজনে হারিয়ে যাওয়া সেই ৪ শিশু
দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানে প্রশিক্ষিত কুকুরসহ শতাধিক সৈন্য পাঠানো হয় জঙ্গলে। যোগ দেয় স্থানীয় আদিবাসীরাও। উদ্ধারকারী ও শিশুদের পরিবারের বিশ্বাস ছিল, দুর্ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ ক্যাকুয়েটা বিভাগের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তারা।
জানা যায়, আদিবাসী পরিবারে জন্ম হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই জঙ্গল ও প্রকৃতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় শিক্ষা পেয়েছিল ওই শিশুরা। আর সেই জ্ঞানই জঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশ প্রাণ বাঁচিয়েছে তাদের।
ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব ইনডিজেনাস পিপলস অব কলম্বিয়ার (ওপিআইএসি) বিবৃতি অনুসারে, আমাজনে ওই শিশুদের বেঁচে যাওয়ার ঘটনা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও জ্ঞানের চিহ্ন, যা তাদের মাতৃগর্ভ থেকেই শেখানো শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন>> পাঁচ দশকে বিশ্বে বন্যপ্রাণী কমেছে ৬৯ শতাংশ: রিপোর্ট
জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার পর মূলত ইয়ুক্কা (একধরনের গুল্ম) আটা খেয়ে বেঁচেছিল চার ভাইবোন। এই আটা তারা পেয়েছিল বিধ্বস্ত প্লেনের ভেতর। উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার থেকেও ফেলা খাবারও পেয়েছিল তারা।
তবে এগুলোর পাশপাশি বীজ, ফলমূল, গাছের শেকড় ও নানা ধরনের গাছপালাও খাচ্ছিল ‘জঙ্গলের শিশুরা’। এর মধ্যে কোনগুলো খাওয়ার যোগ্য, সেই শিক্ষা তারা পরিবার থেকেই পেয়েছিল। ন্যাশনাল ইনডিজিনাস অর্গানাইজেশন অব কলম্বিয়ার (ওএনআইসি) কর্মকর্তা লুইস অ্যাকোস্টা বার্তা সংস্থা এএফপিকে এসব কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন>> আমাজন নিধনের নতুন রেকর্ড
হারিয়ে যাওয়া চার ভাই-বোনকে উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন অ্যাকোস্টা। তার মতে, ওই চার শিশু ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ দিয়ে আবিষ্ট ছিল।
ওএনআইসি’র আরেক নেতা জাভিয়ের বেটানকোর্ট বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের একটি বিশেষ সংযোগ রয়েছে। জঙ্গলে বসবাসকারী এবং এর যত্ন নেওয়া আদিবাসীদের মতো গোটা বিশ্বেরই প্রকৃতির সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক প্রয়োজন।
সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/