সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালালো কারা?
ইউক্রেনের ভেতর থেকে রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল একটি সশস্ত্র দল। মস্কো বলছে, যেসব ‘নাশকতাকারী’ এই হামলা চালিয়েছিল, তাদের পরাস্ত করা হয়েছে। দু’দিন লড়াইয়ের পর রুশ বাহিনী দাবি করছে, বহু হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বাকিরা ইউক্রেনে পালিয়ে গেছে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, সংঘর্ষে তাদের কেউ মারা যায়নি। তবে কয়েকজন আহত হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের বাহিনী ৭০ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে এবং বাকিদের ইউক্রেনে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে।
মস্কোর দাবি, এসব হামলাকারী ইউক্রেনীয় নাগরিক। কিন্তু ইউক্রেন বলছে, এই যোদ্ধারা ইউক্রেনীয় নয়। তারা ক্রেমলিনবিরোধী দুটি আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য।
আরও পড়ুন>> ইউক্রেন থেকে ঢুকে রাশিয়ার ভেতরে হামলা
ওই দুই বাহিনীও দাবি করছে, তারাই রাশিয়ার ভেতরে এই হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকারকে উৎখাতের জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।।
রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, নাশকতা করার জন্য সশস্ত্র একটি ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্ত পার হয়ে গত সোমবার (২২ মে) সীমান্তবর্তী গ্রাভোরনোস্কিতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে রাশিয়া।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রুশ বাহিনী হামলাকারীদের আটকে দিয়েছে এবং পরাজিত করেছে। তাতে ৭০ জনেরও বেশি ‘ইউক্রেনীয় সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
ওই অঞ্চলের গভর্নর ভাচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেছেন, হামলায় যেসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন>> বেলগোরদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের এখনই না ফেরার আহ্বান রাশিয়ার
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ার সীমানার ভেতরে খুব নিচ দিয়ে একটি হেলিকপ্টার উড়ছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ ভূখণ্ডে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। হামলার পর পরই মস্কো বেলগোরদ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে যোগাযোগ ও চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, এই হামলায় জড়িতরা ফ্রিডম অব রাশিয়ান লিজিওন এবং রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কোর মানে দুটি গ্রুপের সদস্য।
আরও পড়ুন>> কিয়েভে ৩০ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার
ফ্রিডম অব রাশিয়ান লিজিওন ইউক্রেন-ভিত্তিক রুশ মিলিশিয়াদের একটি গ্রুপ। গ্রুপটি বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার ভেতরে তৎপর রয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কোর বা আরডিকে আলোচনায় আসে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। ওই সময় সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার ব্রিয়ান্সক অঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল তারা। ওই হামলায় ৪৫ যোদ্ধা অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করে তার।
এই গ্রুপের নেতা ডেনিস কাপুস্তিন অথবা ডেনিস নিকিতিন নামে পরিচিত। তিনি একজন রুশ জাতীয়তাবাদী। গ্রুপটি প্রকাশ্যে এক জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।
এ দুটি বাহিনীকে এর আগে আন্তর্জাতিক বাহিনী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল, যারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত। কিয়েভের গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তা আন্দ্রি ইওসোভ বলেছেন, গ্রুপ দুটি রুশ ভূখণ্ডের ভেতরে স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং এদের সঙ্গে ইউক্রেনীয়রা জড়িত নয়। ইউক্রেনীয় টিভিতে তাদের মিলিশিয়া এবং রুশ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> রাশিয়ার দখলে বাখমুত, সৈন্যদের পুরস্কার দেবেন পুতিন
তবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনে অনেক জাতিগত রুশ বসবাস করলেও তারা ইউক্রেনীয় জঙ্গি। তার দাবি, বেলগোরদে এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/