ডোকলাম সংকট
চীনের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি চায় ভুটান, ভারত কি মানবে?
দু’পাশে দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারত, তার মাঝখানে ছোট্ট দেশ ভুটান। এমন ভৌগোলিক অবস্থান অনন্য হলেও এর জন্য হিমালয় সংলগ্ন দেশটিকে মূল্য দিতে হচ্ছে।
যে দুটি দেশের সঙ্গে এখনো চীনের স্থল সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি তার একটি ভুটান, অন্যটি ভারত। ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শক্তিশালী এই প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ভুটানের ওপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে।
আরও পড়ুন>> চীনের কাছে জমি হারাচ্ছে ভারত, ২৬টি পেট্রোলিং পয়েন্ট হাতছাড়া
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করলো ভুটান
কিন্তু চাইলেই চীনের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করা ভুটানের জন্য কঠিন। সম্ভাব্য এই চুক্তির জন্য তাদের আরেক বড় প্রতিবেশী ভারতের অনুমোদন প্রয়োজন।
থিম্পু ও দিল্লির মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এছাড়া, ভারত ভুটানকে শত শত কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
২০১৮ সালে লোটে শেরিং ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাশাপাশি। ছবি সংগৃহীত
চীনের সঙ্গে হিমালয়ের উত্তর ও পশ্চিমে ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভুটানের। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ডোকলাম মালভূমি নিয়ে। এটি ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের (ত্রি-সন্ধি) খুবই কাছাকাছি অবস্থিত। ভুটান ও চীন উভয়ে ডোকলাম মালভূমিকে নিজেদের বলে দাবি করে এবং ভারত থিম্পুর দাবিকে সমর্থন করে।
ভারতের অবশ্য থিম্পুকে সমর্থন করার নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোকলাম মালভূমি ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন>> শুধু লাদাখ নয়, চীনের টার্গেটে ভারতের আরও অনেক এলাকা
ভারত মনে করে, চীন যদি ওই অঞ্চলে কোনো ধরনের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়, তবে সেটি তাদের শিলিগুড়ি করিডোরের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। চিকেনস নেক নামে পরিচিত করিডোরটি ২২ কিলোমিটার চওড়া একটি এলাকা, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করেছে।
সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বেলজিয়ান পত্রিকা লা লিব্রেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তার দেশের সীমাবদ্ধতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান শুধু ভুটানের একার ওপর নির্ভর করে না। আমরা তিনটি পক্ষ। এখানে বড় বা ছোট দেশ বলে কিছু নেই, তিনটি সমান দেশ, তিনটি সমান অংশ। আমরা প্রস্তুত। বাকি দুই অংশীদার প্রস্তুত হলেই আলোচনা শুরু করতে পারবো।
আরও পড়ুন>> চীন-ভারত যুদ্ধ হলে কার পক্ষে কোন দেশ?
ভুটান ও চীন ১৯৮৪ সাল থেকে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে। দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে একটি বা দুটি বৈঠক করেই কিছু সীমানা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন লোটে শেরিং। এসময় ভুটানের ভূখণ্ডে কোনো চীনা অনুপ্রবেশ ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চীন সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের টহল। ছবি সংগৃহীত
ভুটানিজ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ভারতের জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন অনেকে, বিশেষ করে গণমাধ্যমগুলো। ভুটান ও চীনের মধ্যে ত্রি-সন্ধি সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো বিনিময় সমঝোতা হতে পারে, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক ভাষ্যকার। কেউ কেউ বলছেন, ডোকলামের দাবি নিয়ে ভুটান যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করছে না।
হিমালয়ান সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক পি স্তবদান বলেন, চীন সীমান্ত নির্ধারণ করতে ভুটানকে চাপ দিচ্ছে, যেন দিল্লিকে বিপদে ফেলা যায়। ভারত এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন>> লাদাখ সীমান্তের পাশে নতুন তিনটি রানওয়ে তৈরি করছে চীন
তিনি বলেন, এটি স্পষ্ট যে, ভুটানিজরা তাদের মতভেদ নিরসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চাইছে এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে চীনা ভূমিকার বিষয়ে সম্প্রতি ভুটানিজদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
লোটে শেরিংয়ের বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পরে চলতি মাসের শুরুর দিকে মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন ভুটানিজ প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, আমি নতুন কিছু বলিনি এবং [ভুটানের] অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে শেরিংয়ের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে ভুটানের অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন। তবে চীন মনে করছে, দিল্লির সমর্থন ছাড়া থিম্পু কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে সমস্যার মুখে পড়বে।
সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো লিউ জোংই বলেন, এখানে বাধা ভারত। চীন এবং ভুটান যদি সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেও ফেলে, তাহলে শুধু ভারতই বাকি থাকবে। আমার মনে হয় না, ভারত এটি হতে দেবে।
তিনি বলেন, চীন-ভুটান ১৯৯৬ সালের দিকে একবার চূড়ান্ত চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতের হস্তক্ষেপে শেষপর্যন্ত সেটি ভেস্তে যায়।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/