সুদানে আধাসামরিক-সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই, নিহত ২৭
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের সেনাবাহিনী ও শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ে অন্তত ২৭ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিন কর্মীও রয়েছেন বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সুদানের ডক্টরস ইউনিয়ন জানিয়েছে, সহিংসতায় অন্তত ২৭ জন নিহত এবং প্রায় ২শ’ জন আহত হয়েছে। তবে বলেছে, এই হতাহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক কতজন তা জানা নেই। এর আগে ডক্টরস ইউনিয়ন তিনজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু নিশ্চিত করে জানিয়েছিল।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) দেশটির একটি সামরিক ঘাঁটিতে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সুদানের সামরিক নেতৃত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্বের ফলে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঘটেছে।
আরও পড়ুন>> ঘুমে বেঘোর দুই পাইলট, ৩৭ হাজার ফুট ওপরে চক্কর দিচ্ছিল বিমান
জানা যায়, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সদস্যসরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, সেনাপ্রধানের বাসভবন, খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনসহ দুটি বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে।
তবে আরএসএফের এ দাবি প্রত্যাখান করেছে সেনাবাহিনী। বিমানবন্দরসহ খার্তুমের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাল্টা দাবি করেছে তারা। এসব জায়গায় সারারাত তুমুল লড়াই চলেছে।
আরএসএফ এর নেতৃত্বে দিচ্ছেন সুদান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি হেমেতি নামে অধিক পরিচিত। তিনি সেনাপ্রধান বুরহানকে অপরাধী ও মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন>> সুদানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ৩৩
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধানকে লক্ষ্য করে দাগালু বলেন, আমরা জানি আপনি কোথায় লুকিয়েছেন। আমরা আপনাকে খুঁজে বের করবো ও বিচারের মুখোমুখি করাবো। অথবা অন্যসব ‘কুকুরের’ মতো আপনিও মরবেন।
এদিকে, দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি কী তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ উভয় পক্ষই পরষ্পরের বিরুদ্ধে আগে হামলা করার ও অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ তুলছে। তাছাড়া দুই পক্ষই পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করছে।
এদিকে, শনিবারের সংঘাতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা। কারণ, সংঘাত রাজধানী জুড়ে কয়েকটি বেসামরিক আবাসিক এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত তিন জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সুদানের বিমান বাহিনী আরএসএফর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।
আরও পড়ুন>> ১২ বছর বয়সী বালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার গরু!
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে রাজধানী খার্তুমের আকাশে সামরিক উড়োজাহাজ চক্কর দিতে দেখা গেছে। তাছাড়া শহরটির বেশ কয়েকটি অংশে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আশেপাশের শহরগুলোতেও গোলাগুলির কথা জানিয়েছেন।
খার্তুমে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন প্রাঙ্গনে আরএসএফ বাহিনীর বিপুল সংখ্যায় সদস্য জড়ো হয়েছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাবিল আব্দাল্লাহ।
রয়টার্সের এক সাংবাদিক সড়কে কামান ও সাঁজোয়া যান নামানো হয়েছে বলে জানান। এমনকি, সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উভয়ের সদরদপ্তরের কাছে ভারি গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে।
টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় আকাশে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সংঘাতময় এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী চাদ সুদানের সঙ্গে পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন>> সুদানে সহিংসতায় নিহত অন্তত ১৬৮
আন্তর্জাতিক সব এয়ারলাইন সুদানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে। যদিও শনিবার সংঘাতের মধ্যেই খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায়। পরে এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রানওয়েতে থাকা অবস্থায় তাদের উড়োজাহাজে আগুন ধরে গিয়েছিল।
এয়ারলাইনটির সব যাত্রী, ক্রু ও কর্মীদের খার্তুমে সৌদি আরবের দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সুদান থেকে সৌদি আরব যাওয়া ও আসার সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ সুদানে বিবাদমান সব পক্ষকে সংঘাতের পথ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। সুদানের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফোনালাপ করেছেন।
আরও পড়ুন>> সুদানের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদকের পদত্যাগ
দরিদ্র দেশ সুদান অর্থনৈতিকভাবে আগে থেকেই খুব বাজে অবস্থায় রয়েছে। দেশটির একাধিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতার ইতিহাসও দীর্ঘ। এর মধ্যেই আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা সংঘর্ষ দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও বেশি খারাপ করে তুললো।
অবশ্য সুদানের রাজনীতি ২০২১ সালের এপ্রিলে ঘটা সামরিক অভ্যুত্থানের আগে থেকেই উত্তপ্ত। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সুদানকে শাসন করা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করা হয়। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে সুদানের ক্ষমতা দখল করে ছিলেন।
বশিরকে উৎখাতের পর সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করে আসছে। যে কাউন্সিলের মূলে রয়েছেন সামরিক জেনারেলরা। কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আরএসএফ প্রধান জেনারেল দাগালু, প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান।
আরও পড়ুন>> সুদানে স্বর্ণের খনি ধসে নিহত ৩৮
অনেক দিন ধরেই আরএসএফকে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া ১০ বছর পেছাতে চায় আরএসএফ। কিন্তু সেনাবাহিনী মনে করে প্রক্রিয়াটি দুই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়া উচিত।
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা
এসএএইচ