রমজানে আল-আকসার পর গাজা-লেবাননে ইসরায়েলি হামলা
পবিত্র রমজান মাসে আল-আকসা মসজিদে পরপর দু’দিন তাণ্ডব চালানোর পর অধিকৃত গাজা এবং প্রতিবেশী দেশ লেবাননে বিমান হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) রাতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। খবর আল-জাজিরার।
স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে এক বিবৃতিতে দখলদার বাহিনী বলেছে, তারা এই মুহূর্তে লেবাননে হামলা চালাচ্ছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় ঘোষণা দেন, তার দেশের শত্রুদের ‘যেকোনো আগ্রাসনের জন্য মূল্য দিতে হবে’। এর পরপরই গাজায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যেতে থাকে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে গাজা ও লেবাননে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা কেউ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন>> আল-আকসায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বাংলাদেশের
এর আগে, গত বুধবার পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থাপনা আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরের দিকে এই হামলা চালানো হয়। সে সময় গ্রেফতার করা হয় কমপক্ষে ৪০০ ফিলিস্তিনিকে।
এর পরের দিন আল-আকসায় ফের তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলিরা। এসময় মসজিদে ইবাদত করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের আল-আকসা থেকে জোর করে বের করে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আরও পড়ুন>> আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলের হামলা, ৪০০ ফিলিস্তিনি গ্রেফতার
পবিত্র মসজিদটিতে ইসরায়েলি তাণ্ডবের পর অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হন বহু ফিলিস্তিনি। এছাড়া নাবলুসে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া বিষাক্ত গ্যাসে অন্তত ১২ ফিলিস্তিনি আহত হন। হেবরনের উত্তর সিটি সংলগ্ন বাইত উমর, জেনিন-বেথেলহেমেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পাশাপাশি, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে ৩৪টি রকেট ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি আকাশেই ধ্বংস করা হয় এবং অন্তত চারটি রকেট ইসরায়েলের ভূমিতে গিয়ে আঘাত হানে।
এগুলো ছিল লেবানন থেকে চলতি বছরে প্রথম এবং ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ বাহিনীর সঙ্গে ৩৪ দিনের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের দিকে সর্বোচ্চ রকেট ছোড়ার ঘটনা।
আরও পড়ুন>> আল-আকসার প্রবেশ পথে ফিলিস্তিনিকে গুলি করে মারলো ইসরায়েলি বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা। ছবি সংগৃহীত
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা হামাসকে লেবাননের মধ্য থেকে কাজ করতে দেবে না এবং লেবানিজ ভূখণ্ড থেকে উৎক্ষেপিত প্রতিটি রকেটের জন্য দেশটিকে দায়ী করা হবে।
দেশে দেশে নিন্দার ঝড়
এদিকে, রমজান মাসে আল-আকসায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন দেশ ও জোট। দখলদার বাহিনীর তাণ্ডবের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কে।
ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জানিয়েছে আরব লীগ। আল-আকসায় হামলার জেরে ২২ দেশের আঞ্চলিক জোটের এক জরুরি বৈঠক থেকে এই নিন্দা জানানো হয়।
আরও পড়ুন>> রোজার প্রথম দিনেই ইসরায়েলের হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত
মালয়েশিয়া বলেছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড বেআইনি। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দাবি জানিয়েছে দেশটি।
আরও পড়ুন>> দখলদার ইসরায়েল আজ বিশ্বের ৪র্থ সুখী দেশ, কেমন আছে ফিলিস্তিন?
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর মাধ্যমে মৌলিক নাগরিক বিধি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, ধর্মের স্বাধীনতাকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনায় রাখতে হবে এবং বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
কানাডার নিউ ডেভেলপমেন্ট পার্টি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছে, এই পরিস্থিতি কানাডা দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না। হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর, বিরক্তিকর ও বর্বর’ আখ্যা দিয়ে দলটির প্রধান জগমিত সিং এ ঘটনায় কানাডার করণীয় ঠিক করতে সংসদে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
কেএএ/