ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা

নিউমার্কেটে বাংলাদেশিদের ভিড়, সহজে মিলছে না হোটেলরুম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৩
ধৃমল দত্ত, কলকাতা:

রমজান শুরু হতে না হতেই ঈদের কেনাকাটা করতে কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। আর শপিংয়ের জন্য বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের জায়গা হলো এপাড়ের নিউমার্কেট। অনেকে এ জায়গাটিকে কলকাতার মধ্যে এক টুকরো বাংলাদেশ বলেও দাবি করেন।

ন্যায্যমূল্যে হোটেলরুম, কেনাকাটা বা খাওয়া-দাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের কাছে কলকাতার নিউমার্কেট একপ্রকার আদর্শস্থল। জানা যায় বাংলাদেশ থেকে সড়ক, রেলপথ কিংবা আকাশপথে কলকাতায় পা রেখেই নিউমার্কেটের হোটেলগুলোতে উঠেছেন পর্যটকরা।

আরও পড়ুন>> বিয়ের মৌসুমে কলকাতায় কেনাকাটার সেরা ঠিকানা

হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়েই কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়ছেন অনেকেই। তাদের মন্তব্য, অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে রমজানের শুরুতেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। আবার অনেকেই আছেন, যারা পরিবার নিয়ে মেডিক্যাল চেকআপ বা চিকিৎসা নেওয়া শেষে ঈদের কেনাকাটা করে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে আসা জাহিদ হাসান নামে এক পর্যটক বলেন, আমি মূলত চিকিৎসা করাতে এসেছি। এই ফাঁকে ভাবলাম, কলকাতার নিউমার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যাই। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ চলে এসেছি।

ঢাকার বাংলামোটর থেকে কলকাতায় এসেছেন মোহাম্মদ ইসরাফিল মিয়া শান্ত। মূলত মেডিক্যাল চেকআপ করাতেই পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসেছেন তিনি। কিন্তু স্ত্রীর বায়না, কলকাতা থেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে হবে। স্ত্রীর কথা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিউমার্কেটে কেনাকাটা শুরু করেছেন শান্ত।

আরও পড়ুন>> কলকাতায় বাংলাদেশি খাবারের উৎসব

শান্ত বলেন, বাংলাদেশে গেলেও ঈদের শপিং করতে হবে। তবে আমাদের দেশে কিছু কিছু জিনিসের দাম সামান্য বেশি। তাই এখান থেকে কিনে নিয়ে যাওয়াই ভালো। শান্তর স্ত্রী রুনা বলেন, আমরা এসেছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু যেহেতু সামনে ঈদ, কেনাকাটা করতেই হবে। তাই ভাবলাম, এখান থেকেই সেরে ফেলি।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) নিউমার্কেটে উপচেপড়া ভিড় না থাকলেও, এক সপ্তাহ আগেও এখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। হোটেলের একটি রুম পেতে অনেককেই হাপিত্যেশ করতে দেখা গেছে। ভাগ্য ভালো থাকলে বেশি দাম কিংবা বকশিস দিয়ে রুম পেয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার থাকার জায়গা না পেয়ে কলকাতা ছেড়ে সুদূর চেন্নাই চলে গেছেন বলেও জানা যায়। 

বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পোশাক ব্র্যান্ডের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার নাসির আল হোসেইন। তিনি বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় অন্তত ত্রিশটি হোটেলে গিয়েছি। প্রথমে কোথাও রুম পাইনি। পরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রুম ম্যানেজ করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন>>  বাংলাদেশি পর্যটকে মুখর কলকাতা, হোটেল পাওয়া নিয়ে হাহাকার

নাসির আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর কলকাতায় খাবারের দাম কিছুটা বেশি। অন্যদিকে, প্রথমবার কলকাতায় এসে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ওরফে মিন্টু ফকিরের। তার দাবি, কলকাতায় থাকার জায়গা না পেয়ে সোজা চলে গিয়েছিলেন চেন্নাই।

মিজানুর রহমান বলেন, ১০ মার্চ আমরা যখন কলকাতায় আসি, তখন কোনো হোটেলে রুম ফাঁকা ছিল না। থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে না পেরে আকাশপথে চেন্নাই চলে যাই। পরে চেন্নাই থেকে ফের কলকাতায় আসি। দ্বিতীয়বার তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। হোটেলে রুমও পেয়েছি, কেনাকাটাও করেছি।

অনেকে বলছেন, হোটেলে জায়গা না পাওয়ার কারণ হলো বাংলাদেশ থেকে একই সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক পর্যটকের আগমন। বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা সুলতান খান বলেন, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বন্ধুকে নিয়ে কলকাতায় আসি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা হোটেল পেয়েছি, তাও বারোশ রুপির জায়গায় আঠারোশ রুপি গুনতে হয়েছে।

আরও পড়ুন>> কলকাতা রেলস্টেশনে চালু হলো বাংলাদেশি ভিসা তথ্য কেন্দ্র

তবে বাংলাদেশিদের আগমনে সবচেয়ে বেশি খুশি স্থানীয় বিক্রেতারা। করোনার কারণে দুই বছরেরও বেশি সময় ব্যবসায় মন্দা ছিল। এবার সে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন অনেকেই।

নিউমার্কেটের বিখ্যাত পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘মিলন’র কর্মকর্তা রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই বাংলাদেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই করোনার কারণে গত দু’বছর বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি। তবে মাস দেড়েক আগ থেকে আবারও প্রচুর ক্রেতা পাচ্ছি। রমজানের প্রথম সপ্তাহে ভিড় কিছুটা কম থাকবে। এরপর থেকে কেনাবেচা ক্রমেই বাড়বে বলে আশা করছি।  

আরও পড়ুন>> পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম না বেশি?

রাজেশ তিওয়ারি আরও বলেন, আগে শুধু ঈদ উপলক্ষেই বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় আসতেন। তবে এখন দিন বদলেছে। বছরের বিভিন্ন সময়েই তারা কলকাতায় আসছেন, কেনাকাটা করছেন। আমার আশা, গত বছরগুলো তুলনায় এ বছর বিক্রি অনেক বেশি হবে।

এসএএইচ