মঙ্গলবারও বৈঠকে বসছেন পুতিন-শি জিনপিং
তিন দিনের সফরে মস্কোতে অবস্থান করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তার ‘প্রিয় বন্ধু’ শি জিনপিং মঙ্গলবার (২১ মার্চ) নৈশভোজের পর আবারও বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা গেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর পশ্চিমা বিশ্বের দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার সময় শি জিনপিং ‘নিরপেক্ষ’ থেকেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরপরই ক্রেমলিন সফরে গেছেন শি জিনপিং। ওয়াশিংটন শি জিনপিংয়ের এই সফরের নিন্দা জানাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বলছে, বেইজিং মস্কোকে আরও অপরাধ করার জন্য ‘বিশেষ সুরক্ষা’ প্রদান করছে।
আরও পড়ুন> রাশিয়ায় পৌঁছেছেন শি জিনপিং
এ মাসের শুরুতে তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন শি জিনপিং। এরপর তার প্রথম বিদেশ সফর এটি। এই সফরের মধ্যদিয়ে শি জিনপিং তার ঘনিষ্ঠ মিত্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের একটি সম্ভাব্য শান্তিরক্ষক হিসেবে বেইজিংকে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন।
সোমবার ক্রেমলিনে দেখা করার সময় পুতিন ও শি একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো পরে জানায় তারা প্রায় ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। মঙ্গলবারও আলোচনায় বসার কথা এই দুই শীর্ষ নেতার।
টেলিভিশনে প্রচারিত এক মন্তব্যে, পুতিন শিকে বলেন তিনি ইউক্রেন সংঘাতের সমাধানের জন্য চীনের প্রস্তাবগুলোকে সম্মানের সঙ্গে দেখছেন। শি জিনপিং তার অংশীদার হওয়ার জন্য পুতিনের প্রশংসা করেন। রাশিয়ানরা পুতিনকে পরের বছর পুনরায় নির্বাচিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শি।
মস্কো কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে শির সফরের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে আসছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) শুক্রবার ইউক্রেন থেকে শিশুদের নির্বাসনের জন্য পুতিনকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরও তার এ সফর নতুন অর্থ তৈরি করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন> ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ/কৃষ্ণসাগর হয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়লো
অভিযোগ অস্বীকার করে মস্কো বলছে, এটি এতিমদের সুরক্ষার জন্য নিয়েছে এবং আইসিসির প্রসিকিউটর ও বিচারকদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করেছে তারা। বেইজিং বলছে, এই গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্বিমুখী আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ক্রেমলিনকে জবাবদিহি করতে চীন কোন দায় বোধ করে না বলে আইসিসি পুতিনের জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার কয়েকদিন পরেই শি রাশিয়া সফর করছেন।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে পুতিনকে চাপ দেওয়ার জন্য শির প্রভাব খাটানো উচিত।
চীন ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য একটি শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করেছে। যদিও পশ্চিমারা এটি খারিজ করে দিয়েছে।
পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন পুতিন যখন ইউক্রেনের বিষয়ে শির কাছে শক্তিশালী সমর্থন খুঁজছেন, তারা সন্দেহ করেছিলেন তার মস্কো সফরের ফলে কোনো সামরিক সমর্থন হবে।
ওয়াশিংটন কয়েক সপ্তাহ ধরে বলছে তারা আশঙ্কা করছে চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে পারে। যদিও বেইজিং বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
লন্ডনের চাথাম হাউসে এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের জেষ্ঠ্য রিসার্চ ফেলো ইউ জি বলেছেন, ‘শির সফর সঙ্গী হিসেবে পিপলস লিবারেশন আর্মির কোনো বড় কর্মকর্তা নেই। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, বেইজিং মস্কোকে কোনো সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
কিয়েভ বলছে, রাশিয়া তার সৈন্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। গত মাসে বেইজিংয়ের শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসার পর সতর্কতার সঙ্গে এটিকে স্বাগত জানায় ইউক্রেন।
সূত্র: রয়টার্স
এসএনআর/জিকেএস