নকলের সুযোগ চাই!
পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়া ‘গার্ডের’ প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
করোনাকালে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশোনার অভ্যাস চলে গেছে। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে এবং প্রয়োজনে দেখে বা নকল করে উত্তর লেখার সুযোগ দিতে হবে। এমন অদ্ভুত দাবিতে গত বুধবার (১৫ মার্চ) রাস্তা অবরোধ, শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি থেকে শুরু করে পরীক্ষাকেন্দ্রের কলেজে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর, বিক্ষোভ করেছেন মুর্শিদাবাদের একদল শিক্ষার্থী।
আক্রান্ত শিক্ষকদের দাবি, কলেজজুড়ে ভয়ংকর তাণ্ডব চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একে শিক্ষাক্ষেত্রে কালো দিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন>> করোনায় দৈনিক পড়াশোনা কমেছে চার ঘণ্টা, ঝরে পড়ায় শীর্ষে ছেলেরা
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে জানা যায়, মুর্শিদাবাদের ডোমকল বসন্তপুর কলেজের সাধারণ বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর কেন্দ্র পড়েছে শেখপাড়া জি ডি কলেজে। তবে সেখানে খুব কড়া ‘গার্ড’ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ‘অযথা বাড়তি নজরদারি’ করছেন শিক্ষকরা। ফলে অন্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে উত্তর লিখতে পারেননি তারা।
ওইদিন পরীক্ষা শেষে শেখপাড়া জি ডি কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে এক দফা গণ্ডগোল হয় বসন্তপুর কলেজের পরীক্ষার্থীদের। কলেজের সিসিটিভি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পরীক্ষাকেন্দ্রে কঠোর নজরদারির বিরুদ্ধে বুধবারও সরব হন পরীক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন>> ইসলাম ধর্মের পরীক্ষায় হিন্দু ধর্মের প্রশ্নপত্র
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পানির বোতল ছাড়া আর কিছু নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না বলে বুধবার নির্দেশিকা জারি করে জি ডি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই নির্দেশিকার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে লিখতে দিতে হবে। প্রয়োজনে নকলের সুযোগও দিতে হবে।
ডোমকল বসন্তপুর কলেজের বিক্ষোভকারী ছাত্র তোফাজুল আহমেদ শেখ বলেন, করোনাকালে তিন বছর কোনো পড়াশোনা না করেই পাস করেছি। পরীক্ষাও দেইনি। তাই পড়াশোনার অভ্যাস আর নেই। এখন হঠাৎ করে আমরা কীভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখবো?
তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেলে তবু একটু লেখা যায়! তাই আমাদের পরিষ্কার দাবি, পরীক্ষাকেন্দ্রে আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। খুব প্রয়োজনে দুই-একটা উত্তর দেখেও লিখতে দিতে হবে।
এই পরীক্ষার্থীর যুক্তি, এটি তো আইএএস, আইপিএস কিংবা অন্য কোনো চাকরির পরীক্ষা নয়। ‘সামান্য’ ডিগ্রির পরীক্ষা। এখানে এত কড়াকড়ির কী আছে?
আরও পড়ুন>> পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও পেলো বৃত্তি, সংশোধিত ফলে বাদ
যদিও বিক্ষোভকারীদের এমন অযৌক্তিক দাবি মানতে নারাজ শিক্ষকরা। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের হাতাহাতি শুরু হয় বলে অভিযোগ।
শিক্ষকরা জানান, তাদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখেন পরীক্ষার্থীরা। এসময় বাঁশ-লাঠি নিয়ে কলেজে ভাঙচুরও চালানো হয়। কলেজ লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেষপর্যন্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। তখন কলেজের বাইরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা।
বুধবার কলেজটির একাধিক জায়গায় ভাঙচুর চালানো ছাড়াও ছোটখাটো অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারী পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এদিন বিক্ষোভের অংশ হিসেবে প্রায় ২০০ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বয়কট করেছেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়া নজরদারি বন্ধ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে, গোটা ঘটনায় মানসিকভাবে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জি ডি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহতাব আলম। কলেজ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক জাহাঙ্গীর ফকির বলেছেন, গণহারে নকলের দাবিতে বসন্তপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের আক্রমণে আমাদের ছয়-সাতজন শিক্ষক আহত। আমি শিক্ষাক্ষেত্রে এমন কালো দিন আর দেখিনি।
কেএএ/