ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের টাকা-পয়সা লুট করে ফেরত পাঠাচ্ছে গ্রিস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩

সীমান্তে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও ফোন কেড়ে নিয়ে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে গ্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে। গত ছয় বছরে তারা এভাবে অন্তত ২২ লাখ ইউরো সমপরিমাণ অর্থসম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তুর্কি সীমান্ত দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর সময় গ্রিক বাহিনী এই অর্থ ছিনতাই করেছে বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস।

খবরে বলা হয়েছে, নগদ অর্থের পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে থাকা অলংকার, মোবাইল ফোন বা অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ছিনিয়ে নেয় গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা। এরপর তাদের জোর করে তুরস্কের দিকে ফেরত পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন>> গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

তবে গ্রিক বাহিনীর ছিনিয়ে নেওয়া সম্পদের অর্থমূল্য ২২ লাখ ইউরোর চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। কারণ যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী বা শরণার্থীকে পুশব্যাক করা হয়েছে, তাদের অনেকেরই তথ্য পাওয়া যায়নি।

jagonews24

ইভরোস সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও, মাইগ্রেশন অ্যাডভোকেসি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এল পাইস।

ছিনতাই নিয়মিত ঘটনা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিসের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছানো উদ্বাস্তু ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অর্থ এবং পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ২০১৭ সালের দিকেও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু গত কয়েক বছরে গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা এটিকে নিয়মিত ঘটনায় রূপ দিয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ইভা কসে জানিয়েছেন, অনিয়মিত পথে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে এবং আগমনে নিরুৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছে গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা।

আরও পড়ুন>> গ্রিসে যে প্রক্রিয়ায় বৈধ হতে পারবেন বাংলাদেশিরা

তিনি বলেন, আপনি যখন ফোন কেড়ে নেন, তখন তারা যে সেখানে ছিল, সেটি হয়তো আর প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু যখন অর্থ লুট করেন, তখন আপনি তাদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তোলেন।

বলকান ও গ্রিসকেন্দ্রিক অভিবাসনবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বর্ডার ভায়োলেন্স মনিটরিং নেটওয়ার্কের সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট হোপ বার্কার বলেছেন, অভিবাসনপ্রতাশীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনগুলো কখনো কখনো রাখা হয়, আবার কখনো নষ্ট করে ফেলা হয়।

‘তবে সীমান্তরক্ষীরা অবশ্যই অর্থটা রেখে দেয়। তারা যদি বুঝতে পারে, কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশী অর্থ লুকিয়ে রেখে মিথ্যা বলছে, তাহলে তাকে মারধর করা হয়।’

আরও পড়ুন>> শরণার্থী প্রবেশ ঠেকাতে গ্রিস সীমান্তে কড়াকড়ি

২০২২ সালে গ্রিক ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গ্রিসের সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো বা পুশব্যাকের শিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৯৩ শতাংশই সীমান্তরক্ষীদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এমনকি সীমান্তরক্ষীদের হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে।

সীমান্তে সহিংসতা
এল পাইসের অনুসন্ধান বলছে, সীমান্ত থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের ধরে পুলিশ স্টেশন বা সামরিক ব্যারাকে নিয়ে যায় গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা। সেখানে তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া এবং মারধর করা হয়। এরপর গ্রিসে আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়েই তাদের জোর করে তুরস্কের দিকে ফেরত পাঠানো হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে জলপথ পাড়ি দেওয়ার সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভেলায় তুলে দেয় গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা। এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় মারা গেছেন অনেকে। এমনকি, তুর্কি সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সম্পূর্ণ নগ্ন মরদেহও পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন>> ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে পদত্যাগ করলেন গ্রিসের পরিবহনমন্ত্রী

ইভা বলেন, আপনি যখন তাদের নগ্ন অবস্থায় ফেলে যান, এর মধ্য দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অপমানিত ও হতাশ করেন। সীমান্তরক্ষীরা মনে করে, এমন আচরণ করলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটি তাদের একটি কৌশল। 

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস, ডয়েচে ভেলে
কেএএ/