ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

১৫০ বছরেও বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়নি কলকাতার ট্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ১০ মার্চ ২০২৩

ধৃমল দত্ত, কলকাতা

কলকাতায় প্রথমবার ট্রাম চালু হয়েছিল সেই ১৮৭৩ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৫০ বছর। ঘোড়ায় টানা ট্রাম রূপান্তরিত হয়েছে বিদ্যুৎচালিত যানে। ঐতিহ্য ধরে রেখে এখনো মানুষ পরিবহন করে চলেছে কলকাতার ট্রামগুলো। কিন্তু এত বছর পরেও সেটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপের শেষ নেই কলকাতাবাসীর।

বলা যায়, কলকাতার মানুষের সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক ট্রামের। শহরে মাটির নিচ দিয়ে চলা মেট্রোরেল আধুনিকতার প্রতীক হলে ট্রাম হলো তার ঐতিহ্যের প্রতীক। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথমবারের মতো ট্রাম চালানো হয়েছিল আর্মেনিয়ান ঘাট (বর্তমান বাবুঘাট) থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত। তবে সেই সময় যথেষ্ট যাত্রী পাওয়া যেতো না বলে সাত বছর পর এই সেবা বন্ধ করে দেয় তখনকার ব্রিটিশ সরকার।

এর বেশ কয়েক বছর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নতুন রূপে তৈরি করা হবে ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি। এরপরেই শিয়ালদহ থেকে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত ট্রাম লাইন পাতানো হয়।

সেই সময় কলকাতার ট্রাম টানতো ঘোড়া। ট্রাম টানার জন্য প্রায় এক হাজার ঘোড়া লন্ডন থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। ১৯ মাইল লাইন ধরে এই ঘোড়াগুলো ট্রাম টেনে নিয়ে যেতো।

১৯০০ সালে কলকাতায় প্রথম ঘোড়ার বদলে বিদুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করে ব্রিটিশ সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ১৯০২ সালে। ওই বছর ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানো হয়। এরপর ধীরে ধীরে উত্তর থেকে দক্ষিণ- গোটা কলকাতায় শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রামের যাত্রা। কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয়দের পাশাপাশি কলকাতায় আসা ভিনদেশি মানুষদেরও পছন্দের পরিবহন হয়ে ওঠে ট্রাম।

যাত্রা শুরুর পর থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতার একমাত্র গণপরিবহন ছিল ট্রাম। এরপর শহরে বাস সেবা চালু হয়। ১৯৭২ সালে ট্রামওয়ে কোম্পানি অধিগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ওই সময় কলকাতার বিভিন্ন পথে ট্রাম চালানো এবং সেগুলো রাখার জন্য তৈরি হয় ‘ট্রাম ডিপো’।

এ শহরে চলাচল করা বেশিরভাগ ট্রামই তৈরি করেছে বিখ্যাত ‘বার্ন স্ট্যান্ডার্ড’ কোম্পানি। প্রতিটি ট্রাম চালাতে ৫৫০ ভোল্ট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ভারতে ট্রামের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছে একমাত্র কলকাতা।

একসময় বাসের ভিড় এড়িয়ে নিত্যদিনের গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকের কাছে পছন্দের বাহন ছিল ট্রাম। তবে কলকাতায় ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে ট্রামের প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে বেশ কিছু রাস্তা থেকে উঠে যায় ট্রাম লাইন। একপর্যায়ে বিতর্ক শুরু হয়, এই গতির যুগে ট্রাম আদৌ রাখা উচিত কি না।

jagonews24

তবে কলকাতাবাসী সবসময় ট্রামের পক্ষে থেকেছে। তাই বারবার পরীক্ষার মুখে পড়েও শহরে রয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এই যান।

মানুষকে ফের ট্রাম অভিমুখী করতে এরই মধ্যে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ কিছু ট্রামের ভেতর তৈরি করা হয়েছে রেস্তোরাঁ। কোথাও রাখা হয়েছে কলকাতার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের তথ্য। যাত্রীদের সুবিধার্থে গ্রীষ্মের দাবাদহ থেকে মুক্তি পেতে এসি ট্রামের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগেই ১৫০ বছর পূর্ণ করেছে কলকাতার ট্রাম। কিন্তু সেটি এখনো হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ কলকাতাবাসী।

সৌম্য আইচ রায় নামে এক বাসিন্দা জানান, ট্রাম নিয়ে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি। এটি বাঙালির মনে-প্রাণে, সংস্কৃতিতে জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে, কলকাতার মানুষের কাছে ট্রাম একটি আবেগের নাম। শৈশবে চলাচলের জন্য আমরা ট্রাম ছাড়া কিছু ভাবতেই পারতাম না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে ট্রাম চলতে দেখেছি। এটি এমন একটি যান, যা পরিবেশ দূষণ করে না। কলকাতার ট্রাম হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে খুবই খুশি হতাম।

অভিনেতা মনোজ মিত্র ট্রামের কথা উঠতেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমার বাবা ও আমাদের সময় গণপরিবহন মানেই ছিল ট্রাম। একসময় ট্রামে উঠলেই পকেট থেকে ‘পেন’ (কলম) তুলে নিতো। ট্রামে ‘পেন চোর’ উঠতো প্রচুর।

আগামী দিনে কলকাতায় ট্রাম থাকবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা মহল থেকে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম ভিড়ের এলাকায় ট্রাম চালানো যায় কি না সেটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

কেএএ/জিকেএস