ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠিয়ে কি ঠিক করলো ন্যাটো সদস্যরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২৯ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব আসন্ন তা সবাই জানে। সবাই জানে, রাশিয়ার পরবর্তী আক্রমণ ঠেকাতে এবং হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনের প্রচুর ট্যাংক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন। সবাই এটাও জানে, আজ হোক বা কাল, ইউক্রেনের প্রয়োজন ঠিকই মেটাবে পশ্চিমা দেশগুলো।

সে কারণেই পশ্চিমাদের ‘তোমার পরে! না, তোমার পরে!’ করার সবশেষ পর্ব পরাজিত হয়েছে। ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কিন্তু এটি যেভাবে এসেছে তা ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণার কারণ হয়েছে, পশ্চিমা ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়া আর কারও উপকারে আসেনি। ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে কেউই সবশেষ নাটকের শেষে ভালোভাবে বের হতে পারেনি। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপভাবে আবির্ভূত হয়েছে জার্মানি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জার্মানি। এর জন্য তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের অধীনে জার্মান সরকারকে অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত দেখা গেছে।

jagonews24জার্মানির তৈরি লেপার্ড ট্যাংক। ছবি সংগৃহীত

শলৎজের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। তবে সেটি এসেছিল ফ্রান্সের একই ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণার পরে।

রাশিয়ার আক্রমণের সপ্তম দিন থেকেই জার্মানির তৈরি লেপার্ড ট্যাংক দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিল ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি তাতে রাজি হয়নি। এমনকি অন্য দেশগুলোকেও তাদের তৈরি ট্যাংক পুনঃরপ্তানির অনুমতি দেয়নি।

গত ২০ জানুয়ারি জার্মানিতে থাকা মার্কিন ঘাঁটি রামস্টেইনে জড়ো হয়েছিলেন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। সেখানে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তির আশা করা হয়েছিল। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর সেদিনও রাজি হননি। তবে মিত্রদের পাশাপাশি দেশে নিজের জোটের ভেতর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে গত ২৫ জানুয়ারি অবশেষে সম্মতি দেন শলৎজ।

ইউক্রেনকে এখন ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। অন্য দেশগুলোকেও ওই ট্যাংক পাঠানোর অনুমতি দেবে তারা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ৪৫তম জন্মদিনে দারুণ উপহার হতে পারে এটি।

jagonews24যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ট্যাংক। ছবি সংগৃহীত

তবে বাকি দেশগুলোও পুরোপুরি নির্দোষ নয়। যুক্তরাষ্ট্র আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে এই কয়েকদিন হলো। ফ্রান্সের এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ মাসের পর মাস না বলার পর মাত্রই জানিয়েছেন, তারা লেক্লার ট্যাংক পাঠানোর বিষয়টি ‘বিবেচনা করছেন’। যুক্তরাজ্য হয়তো নজির স্থাপনে আগ্রহী। দেশটি ১২ বা ১৪টি চ্যালেঞ্জার ট্যাংক পাঠাতে পারে ইউক্রেনে। তবে এ বিষয়ে লন্ডনও সক্রিয় হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এবং তারা যেসব ট্যাংক পাঠাবে, যুদ্ধক্ষেত্রে সেগুলো খুব বেশি কাজে আসবে না। কারণ ইউরোপে সেগুলোর যন্ত্রাংশ ও গোলাবারুদের ভালো সরবরাহ ব্যবস্থা নেই।

ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিতে বিলম্বের কারণে জার্মানির অন্যতম কঠোর সমালোচক ছিল পোল্যান্ড। অথচ তারাও জার্মান ট্যাংক পুনঃরপ্তানির জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে মাত্র এই সপ্তাহে এসে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জার্মান চ্যান্সেলর যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, জার্মানির মতো যুক্তরাষ্ট্রও একই সময়ে ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ করুক। হতে পারে তিনি ভাবছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও ইউরোপে বড় ও শক্তিশালী উপস্থিতি থাকবে রাশিয়ার। সম্ভবত এর জন্যই সতর্ক থাকতে চান শলৎজ।

অনেকে বলবেন, জার্মান চ্যান্সেলরের দ্বিধা সম্পর্কে এই ব্যাখ্যাটি খুবই নিন্দনীয়। ১৯৪১ সালে রাশিয়া আক্রমণ করেছিল জার্মানি। এবার আক্রমণকারী রাশিয়া। কোনো ভুক্তভোগীকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করা এবং আগ্রাসনের মধ্যে তুলনা চলে না। জার্মানির যেসব মানুষ এ দুটি বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, তারা তাদের দেশের ভয়ংকর ইতিহাস থেকে ভুল শিক্ষাই নিয়েছেন।

কেএএ/