ব্লুমবার্গে সাক্ষাৎকার
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইমরান খান
এ বছর ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এবং ঋণ খেলাপির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অব্যাহত ভূমিকাকে সমর্থন করবেন বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
সাবেক এই ক্রিকেট তারকা গতবছর একটি অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর তার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে অপসারিত হন। তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের আশা করেন। দেশটিতে আগামী আগস্টের পরই নির্বাচন হওয়ার কথা। তিনি আরও বলেন, তিনি একটি ‘মৌলিক’ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেখানে এর আগে তিনি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিলেন, ততদিনে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাবে।
৭০ বছর বয়সী ইমরান খান পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে তার বাসভবনে সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, তবে আমাদের হাতে বেশি সময় থাকবে না।’ গতবছর নভেম্বরে তিনি বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে ওই বাড়িতে রয়েছেন এবং সেরে উঠছেন। তার পরিকল্পনা আইএমএফ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন কোনো বিকল্প নেই।’ যেখানে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে বহুবার পিছিয়েছে আইএমএফ।
আরও পড়ুন> অবশেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন ইমরান খান
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি কয়েক মাস ধরে বিপজ্জনকভাবে ঋণ খেলাপির কাছাকাছি চলে গেছে। ইমরান খানের উত্তরসূরি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, তহবিলের চাহিদার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ানো এবং ট্যাক্স ইস্যুতে। গত অক্টোবর থেকে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন এক মাসের আমদানির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই দেশটির। এখনও গত বছরের বিপর্যয়কর বন্যার কারণে ভুগছে পাকিস্তান। মুদ্রাস্ফীতিতে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের।
ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের দেশে আগে কখনো হয়নি এমন নীতি তৈরি করতে হবে। তিনি পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশের ঋণ খেলাপির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি।’
ক্ষমতায় গেলে ইমরান খানের প্রশাসন আবারও শওকত তারিনকে অর্থমন্ত্রী হিসাবে পুনরায় নিয়োগ দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন>পাকিস্তানে উপ-নির্বাচনে বড় জয় পেলেন ইমরান খান
ইমরান খানকে অফিস থেকে অপসারণের পরপরই তিনি রাস্তায় নেমে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকারকে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে বিক্ষোভের নেতৃত্বও দিচ্ছেন।
ইমরান খান তার সরকারের সবশেষ প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটিতে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছিলেন। ফলে একটি বিরোধের সূত্রপাতের জেরে আইএমএফ ঋণ প্রদান কর্মসূচি স্থগিত করেছিল।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, তার সিদ্ধান্ত রাশিয়া থেকে ছাড়ে জ্বালানি পাওয়ার ভিত্তিতে ছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যেদিন ইউক্রেন আক্রমণ করে সেদিন খান পূর্ব নির্ধারিত সফরে মস্কোতে ছিলেন। তিন ঘণ্টার কথোপকথনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাকিস্তানকে জ্বালানি সরবরাহে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছিলেন সে সময়।
ইমরান খান বলেন, তিনি একটি স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করবেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো কোনো একক দেশের ওপর নির্ভর করবে না। তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের উদাহরণও টেনে বলেন, যার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তবুও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে এবং চীনের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য করে।
ইমরান খান বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি দুর্দান্ত সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন তিনি। তবে তার উত্তরসূরির অধীনে সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি বলেন, বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর তিনি কিছু কারণে ‘অনাগ্রহ’ অনুভব করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি ঘটার কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে দায়ী করার প্রয়োজন ছিল।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
এসএনআর/এমএস