ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা এখন দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেকারণে ছোট-বড় অনেক দেশই ক্ষতিকর উপাদান কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বহু দেশ। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ২০২৩ সালে হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু?

২০২৩ সালে ব্রিসবেনে ঠান্ডা পানীয়র গ্রাহকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারেন। কেননা, এই চিনিযুক্ত পানীয় সরবরাহকারী গাড়ি আর জলবায়ুকে উষ্ণ করতে গ্যাস ছড়াতে পারবে না। পেপসিকো অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ন্যাকস ও পানীয় সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ডিজেল চালিত ইঞ্জিন নয় বরং হাইড্রোজেন চালিত জ্বালানি দিয়ে একটি নতুন ধরনের লরি পরীক্ষা করবে। এটি এমন একটি ডিভাইস দ্বারা পরিচালিত হবে যা শুধু জলীয় বাষ্প নির্গত করার সময় হাইড্রোজেনকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে দেশে দেশে জ্বালানির চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে আবারও হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে মনোযোগী বিনিয়োগকারীরা। এটি একটি স্পষ্ট জ্বালানি প্রযুক্তি যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির উৎস থেকে তৈরি করা যায়।

যদিও হাইড্রোজেন জ্বালানি এর আগে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। দুই দশক আগে ইউরোপীয় ও জাপানি গাড়ি নির্মাতারা এই জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে যাত্রীবাহী গাড়ি তৈরির স্বপ্নের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেন। তবে সরকার ও বিনিয়োগকারীরা বাজি ধরে বলছেন, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।

ইস্পাত তৈরির মতো ভারী শিল্প কারখানাগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসাবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করবে ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে গত বছর জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ফলে হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ এক্ষেত্রে একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘সবুজ’ হাইড্রোজেনকে ইলেক্ট্রোলাইজারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে পানিকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে বিভক্ত করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এমন ডিভাইস কাজ করে ইলেক্ট্রোলাইজারে। বিশ্বজুড়ে এই পদ্ধতি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংখ্যা ৬০০ এবং এর মধ্যে অর্ধেক শুধু ইউরোপেই।

বিগ অয়েলের মতো বিশ্বের ছয় বা সাতটি সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস কোম্পানিও হাইড্রোজেনের প্রতি আগ্রহী। কেননা, ‘ব্লু’ হাইড্রোজেন প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে পরিষ্কার উপায়ে তৈরি করা যেতে পারে, যদি মিথেন লিকেজ কম করা হয় এবং ফলস্বরূপ কার্বন নির্গমনকে বন্দী করে আলাদা করা হয়।

হাইড্রোজেনের উদ্দীপনার এই সর্বশেষ ঢেউ কতটা টেকসই তা প্রমাণিত হবে ২০২৩ সালেই। একটি বৈশ্বিক মন্দা অভিনব প্রযুক্তির জন্য তহবিল হ্রাস করতে পারে কারণ কোম্পানিগুলো মূলধন ব্যয় কমিয়ে দেয় ও বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে চলে। সরবরাহ-শৃঙ্খল ব্যাহত হলেও পরিকল্পনা নষ্ট হতে পারে। এসব জটিলতা একটি ব্রিটিশ ফার্ম ‘আইটিএম পাওয়ার’কে তার ইলেক্ট্রোলাইজারের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছে। আবার বিভিন্ন দেশ জ্বালানির ধাক্কা সামলাতে কয়লার মতো নোংরা উৎস থেকে সরবরাহের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, নতুন প্রযুক্তি যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে তার চেয়েও ।

ইলেক্ট্রোলাইজার প্রজেক্টগুলোর মধ্যে কতগুলো বাস্তবে এগিয়ে যায় তার একটি টেলটেল সাইন হবে। আমেরিকার প্লাগ পাওয়ারের চিফ এক্সিকিউটিভ অ্যান্ডি মার্শ আভাস দিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী ইলেক্ট্রোলাইজার বিক্রি কয়েক বছর আগে প্রায় শূন্য থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলার হবে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিন্সির বার্ন্ড হেইড আশাবাদি গিগাওয়াট-স্কেল গ্রিন-হাইড্রোজেন প্রকল্প পরের বছর আরও এগিয়ে যাবে। ব্লুমবার্গএনএফ (বিএনইএফ), একটি গবেষণা সংস্থা, মনে করে ইলেক্ট্রোলাইজার শিপমেন্ট এখন ১ গিগাওয়াট থেকে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৮ গিগাওয়াট হবে, যার বেশিরভাগই এশিয়ায়।

একটি শিল্প সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হাইড্রোজেন কাউন্সিলের ড্যারিল উইলসন বলেছেন, ইউরোপেও সবুজ হাইড্রোজেন নিয়ে অনেক আগ্রহ আছে। ‘ইউরোপ অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং অবশেষে ২০২৩ সালে সেগুলো আলোর মুখ দেখবে।’ তিনি আশা করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো আটকে রেখেছে সেগুলো ছাড় পেয়ে যাবে। হেইড আরও মনে করেন, ইউরোপ হাইড্রোজেন সরবরাহ এবং চাহিদার জন্য প্রথম বিশ্বব্যাপী নিলাম পরিচালনা করবে এবং ইউরোপীয় কমিশন ২০২৩ সালে একটি ইউরোপীয় হাইড্রোজেন ব্যাংক স্থাপন করবে।

বিএনইএফ বলছে, এশিয়াও কম যাবে না। চীন বর্তমানে ইলেক্ট্রোলাইজারের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক দেশ। ফার্মটির ধারণা, কার্বন বৃদ্ধি ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমাতে সাহায্য করবে তাদের এই প্রযুক্তি।

ভারত নিজস্ব গ্রিন-হাইড্রোজেন শিল্পকে উন্নীত করার জন্য বিশেষ নীতি চালু করেছে। এটি পশ্চিমা সংস্থাগুলোকে ইলেক্ট্রোলাইজার তৈরি করতে এবং সেখানে হাইড্রোজেন তৈরি করার জন্য প্ররোচিত করছে। ভারতের গ্রিনকো, একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য সংস্থা, মনে করে বেলজিয়ামের জন ককেরিল, একটি ইলেক্ট্রোলাইজার জায়ান্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের সর্বনিম্ন মূল্যের অ্যামোনিয়া (হাইড্রোজেন থেকে উদ্ভূত একটি জ্বালানি) তৈরি করবে ৷ হোমিহাইড্রোজেন একটি ভারতীয় স্টার্টআপ, একই সময়ে এ ধরনের ইলেক্ট্রোলাইজার তৈরির পরিকল্পনা করছে যার ৯৮ শতাংশ হবে ভারতের নিজস্ব।

কিন্তু ২০২৩ সালে হাইড্রোজেন প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ আসবে আমেরিকায় সরকারি অর্থের জোয়ার-ভাটার মধ্যদিয়ে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন, যা সত্যিই একটি জলবায়ু-পরিবর্তন আইন, সবুজ-হাইড্রোজেন প্রকল্পের জন্য ভর্তুকিতে একটি বিস্ময়কর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হলো কেজিতে ৩ ডলার খরচ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের বিপরীতে, আমেরিকার হাইড্রোজেন নীতি স্পষ্ট ও অত্যন্ত বাধ্যতামূলক। অনেক সবুজ-হাইড্রোজেন প্রকল্প, বর্তমানে যার দাম সাধারণত ২ ডলার কেজিতে এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অক্ষম, হঠাৎ করে ১ ডলার কেজিতে খরচ উপভোগ করবে। কেউ কেউ নেতিবাচক খরচও করতে পারে এতে।

হেইড ইঙ্গিত দিয়েছেন, আমেরিকা হাইড্রোজেন প্রকল্পগুলোকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিনিয়োগ সম্ভবত ১০০ বিলিয়নে পৌঁছাবে। বিশ্বব্যাপী হাইড্রোজেন প্রকল্প নিয়ে দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে। ফলে ২০২৩ সাল হাইড্রোজেন জ্বালানির জন্য একটি মেক-অর-ব্রেক ইয়ার বলে মনে হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/জিকেএস