ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

চারটি মেগা অঙ্গরাজ্যের ওপর নির্ভর করছে আমেরিকার ভবিষ্যৎ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৩

ওয়াশিংটন ডিসিতে কী হচ্ছে তা নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তারা যদি বুঝতে চান আমেরিকা কোন দিকে যাচ্ছে, তাদের উচিত হবে অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকে নজর রাখা। বিশেষ করে চারটি সর্বাধিক জনবহুল অঙ্গরাজ্য যেমন, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক এবং টেক্সাসের ওপর। আমেরিকানদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বসবাস করে এই চারটি অঙ্গরাজ্যে। শুধু তাই নয়, জাতীয় জিডিপির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি আসে এসব অঙ্গরাজ্য থেকে।

শুধু আকারে বড় নয়, এগুলো আত্মগরিমাপূর্ণও করে তোলে গোটা যুক্তরাজ্যকে। মেগা অঙ্গরাজ্যগুলোর অগ্রগতির প্রবণতা, রাজনৈতিক নীতি অন্যান্য রাজ্যে, এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আদর্শিক লাইনে বিভক্ত মেগা অঙ্গরাজ্যগুলো দিকনির্দেশের জন্য বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করে। সেকারণে আমেরিকা ক্রমবর্ধমান বিভক্ত হয়ে উঠছে এমন ধারণাকে মূর্ত করে তোলে।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি লুই ব্র্যান্ডেসের ভাষায়, ফেডারেলিস্ট সিস্টেম রাজ্যগুলোকে তাদের নিজস্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে সক্ষম করে,‘গণতন্ত্রের পরীক্ষাগার’ হিসাবে। ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কের একই মডেল রয়েছে, উচ্চকর এবং উচ্চ প্রবিধান প্রণয়ন এবং একটি উদার সামাজিক-নিরাপত্তাবেষ্টনীর ক্ষেত্রে। তবে ফ্লোরিডা ও টেক্সাস থেকে কম ট্যাক্সেআসে এবং ব্যবস্থাপনাতেও ঘাটতি আছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা এবং ফ্লোরিডা ও টেক্সাস রিপাবলিকানদের দ্বারা পরিচালিত। চারটি ‘ট্রাইফেক্টা’ রাজ্য, যার অর্থ হলো একটি একক রাজনৈতিক দল রাজ্যের আইনসভা ও গভর্নরের অফিস উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে। একদলীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের এ প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ৩৭টি ‘ট্রাইফেক্টা’ অঙ্গরাজ্য রয়েছে, যা ১৯৯২ সালের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এটি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে, কেন রাজ্যগুলো পক্ষপাতমূলক নীতি পরীক্ষা তৈরি করে যা ভোটারদের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে না। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসে এখন গর্ভপাত নিষিদ্ধের আইন রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ টেক্সানরা এ ধরনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছে।

পুরো দেশের মতো, মেগা-স্টেটগুলো বিভিন্ন মেরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা যে নীতিগুলো তৈরি করছে তা একে অপরের সঙ্গে রুখে দাঁড়ানোর মতো। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক গ্রিন-এনার্জিতে উন্নতি করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া ২০৩৫ সাল থেকে পেট্রোল-চালিত অটোমোবাইল বিক্রি নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে। এদিকে, টেক্সাস সম্প্রতি আর্থিক সংস্থাগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে যেগুলো রাজ্যে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য সমর্থন করছে না। ফ্লোরিডা পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসন নীতির ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে বাধা দিয়েছে।

মেগা-স্টেটগুলোতে তিনটি জিনিস দেখার মতো। প্রথমত, বাসিন্দাদের কথাই ধরা যাক। ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কের মতো উচ্চ কর-যুক্ত রাজ্যগুলো থেকে এবং ফ্লোরিডা এবং টেক্সাসের মতো আয়কর নেই এমন রাজ্যগুলোতে বহু মাইগ্রেশন ঘটেছে। ফলে অধিক জনসংখ্যা ভবিষ্যতকে পরিচালিত করবে কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনীতির ইঞ্জিন ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারণ করে। ২০২০ সালের আদমশুমারির পরে, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক প্রতিটি কংগ্রেসে আসন হারিয়েছে, যেখানে টেক্সাস দুটি এবং ফ্লোরিডা একটি আসন লাভ করেছে।

দ্বিতীয়ত, রাজ্যগুলো যেসব নীতিগত বিষয় গ্রহণ করে সেগুলো নজরে নেওয়া দরকার। ক্যালিফোর্নিয়া ও কিছুটা হলেও নিউইয়র্ক নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক এজেন্ডার নীল আলোকসজ্জা হিসেবে দেখে। গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য সুবিধার বিষয়ে ইতিমধ্যে অগ্রগামী নীতির মাধ্যমে, ২০২৩ সালে তারা পরিবেশ, সামাজিক কল্যাণ এবং শ্রম আইন নতুনভাবে প্রণয়নের অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। ফ্লোরিডা এবং টেক্সাস নিজেদেরকে অত্যাধুনিক রিপাবলিকান নীতির পথপ্রদর্শক হিসাবে দেখে এবং সামাজিক ইস্যু ও নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভাজনকারী নতুন আইন পরিবেশন করবে।

তৃতীয় যে জিনিসটি দেখার মতো তা হলো মেগা-রাজ্যগুলোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ। ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের ডেমোক্র্যাটিক শহরগুলোতে সম্প্রতি আগত অভিবাসীদের বাস করা একটি উদাহরণ। অভিবাসী ইস্যু থেকে শুরু করে গর্ভপাত পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানে অনেকগুলো ইস্যু তৈরি হবে। ফলে ২০২৩ সালে মেগা-স্টেটগুলোর গভর্নর ও অ্যাটর্নি-জেনারেলদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও কোথাও দৃশ্যমান হবে না। তারা দুজনেই প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। তারা তাদের রাজ্যগুলোকে আমেরিকান জনগণকে কী অফার করবে তার প্রতীকী উপস্থাপনা হিসাবে ব্যবহার করবেন। ভোটারদের সোনালি রাজ্য কিংবা রোদ্রউজ্জ্বল রাজ্যের মধ্যে ২০২৪ সালে পুরো দেশের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি বেছে নিতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/জিকেএস