দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
মন্দা সত্ত্বেও প্রযুক্তিতে সুবিধা পাবে বড় কোম্পানি
২০২১ সালে ব্যাপক উত্থান দেখেছে বিশ্বের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। সে সময় জাতীয় লকডাউনের কারণে লাখ লাখ মানুষকে কাজে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে বাড়ে কার্যক্রম। এতে ক্লাউড কম্পিউটিং কিংবা সেমিকন্ডাক্টর থেকে ল্যাপটপ সব কিছুর চাহিদা বেড়ে আকাশচুম্বী হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্ব পায় ডিজিটাল পদ্ধতি। যেমন ভিডিও কনফারেন্সিং কোম্পানি জুম পরিচিত হয়ে উঠে। নাসদাক কম্পোজিট (প্রযুক্তি হেভি সূচক) বাড়ে ২১ শতাংশ। স্টার্টআপে ভেনচার ক্যাপিটালিস্টরা ৬২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।
কিন্তু সেই ধারা থমকে যায় ২০২২ সালে। মূল্যস্ফীতি বড়ে যাওয়ার মানেই হচ্ছে স্পিকিউলেটিভ কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে ধস নামা। ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোক্তাদের ব্যয়ে প্রভাব ফেলে। একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যদিকে চীন ও পশ্চিমাদের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি কমেছে। নতুন বাস্তুবতা সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। তাই অনেকে খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে বা পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৩ সালে কারা শীর্ষ স্থানে উঠে আসবে।
এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় থাকবে। কোম্পানির ভৌগোলিক অঞ্চল, এর খাত ও আকার। কিছু বড় দেশ বা অঞ্চল প্রযুক্তিখাতে মন্দার প্রথম ধাপটি পরিহার করতে পেরেছে। বিনিয়োগকারীরা ভবিষৎ নিয়ে এরই মধ্যে একটি মূল্যায়ন করেছে। কারণ বিশ্বজুড়েই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মূল্য কমেছে। মন্দা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হবে তা নির্ভর করে ভবিষৎ বিক্রির ওপর। মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে পশ্চিমা ভোক্তাদের ওপর।
অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও উদ্ভাসিত হচ্ছে। শীর্ষ দশ অ-পশ্চিমা প্রযুক্তি কোম্পানি ৪০ শতাংশ আয় করে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে। তবে চীনের কোম্পানিগুলো নিজ দেশে অনেক সমস্যায় পড়েছে। কারণ দেশটির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়িয়েছে। তারপরও ভালো ব্যবসা করছে তারা।
বেশি কিছু দিক বিবেচনায় মনে করা হচ্ছে, আঞ্চলিকতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে খাত। ২০২২ সালে বিক্রি কম দেখেছে, ভোক্তামুখী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, কম্পিউটার বিক্রি আগামী বছর কমে যাবে। ভিডিও স্ট্রিমিং কোম্পানি নেটফ্লিক্স। ২০২২ সালে এটির সাবস্ক্রাইবার এক দশকের মধ্যে কমে সর্বনিম্ন হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে তারা প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে যেসব কোম্পানি বিজ্ঞাপন বিক্রির ওপর নির্ভরশীল তাদের ওপর চাপ অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ অর্থনৈতিক মন্দায় এইখাতে কার্যক্রম কম থাকে।
অন্যদিকে আডোবি ও ওরাকলের মতো সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ভোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ফিরতে চায়। অ্যামাজন, গুগল ও মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা ধীর হবে। কারণ সফটওয়্যার, সার্ভিস ও ডাটা এখন অনলাইনকেন্দ্রিক হচ্ছে। এতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। যদিও এক্ষেত্রে লাভবান হবে সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো। তাদের সম্পত্তি বেড়ে দ্বিগুণ হবে। তাছাড়া রাশিয়া ও চীনের সাইবার হামলা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
প্রযুক্তিখাতে কোম্পানি গুলোর আকারও অনেক সময় প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে বড় কোম্পানিগুলো স্থিতিশীল থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো তাদের কাছে প্রচুর নগদ অর্থ থাকে। শীর্ষ পাঁচটি প্রযুক্তি কোম্পানির সম্মিলিত নগদ অর্থ বেড়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। নগদ অর্থ দুইভাবে সহায়তা করে। একটি হলো কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ মেধাবীদের ধরে রাখতে পারে বা চাকরিতে আহ্বান করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ছোট কোম্পানিগুলোকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়।
এমএসএম/এএসএম