বাংলাদেশি পর্যটকে মুখর কলকাতা, হোটেল পাওয়া নিয়ে হাহাকার
ধৃমল দও, কলকাতা
উৎসবের মৌসুমে কলকাতায় দুটো দিন কাটিয়ে চেন্নাইয়ে যাবেন মায়ের চিকিৎসার জন্য। এমন পরিকল্পনা নিয়েই বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ময়মনসিংহের বাসিন্দা বাপি সরকার। কিন্তু শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কলকাতার নিউমার্কেটে পৌঁছে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি।
তিন ঘণ্টা ঘুরেও কোনো হোটেলে রুম পাননি বাপি, ফলে শীতের রাতে মার্কুইস স্ট্রিটের রাস্তায় লাগেজ নিয়েই রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাকে। এমনকি, থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে রাতের খাবারও খেতে পারেননি তার পরিবারের চার সদস্য।
এদিন রাতেই এ প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়ে বাপি বলেন, শনিবার বিকেল ৫টার সময় আমরা কলকাতার নিউমার্কেটে আসি। রাত ৮টা বেজে গেছে, এখন পর্যন্ত থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এখন পর্যন্ত ২০-২৫টি হোটেল খুঁজেছি, কোনোটিতেই রুম ফাঁকা নেই।
হতাশ হয়ে তিনি আরও বলেন, এক রুমের জন্য অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ ছয়-আট হাজার রুপি চাইছে। আমার সঙ্গে চারজন আছেন। কলকাতায় দুদিন থেকে অসুস্থ মাকে চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবো বলে ভেবেছিলাম। এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না, হয়তো রাতে বাইরেই থাকতে হবে।
‘নিউমার্কেটের বাইরে রুম খালি আছে, কিন্তু একদিনের জন্য তারা ১০ হাজার রুপি চাইছে। সারাদিন আমরা কেউ কিছু খাইনি। হোটেলই পাইনি, খাবো কী? মাকে যদি থাকতে না দিতে পারি, খাব কী করে! এর আগেও আমি কলকাতায় এসেছি, কিন্তু এরকম কখনো হয়নি।’
বাপির সঙ্গেই এসেছিলেন তার মামা উৎপল সরকার। এই প্রথম কলকাতায় এসে বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পড়েছেনে তিনিও।
তিনি বলেন, হোটেল খুঁজতে খুঁজতে বিরক্ত হয়ে গেছি। প্রথমবার এসেই এমন পরিস্থিতির শিকার হলাম। আবার হোটেল পাওয়া গেলেও, একদিনের জন্য যে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক।
এদিকে, শুধু ময়মনসিংহের বাপি বা উৎপল সরকারই নয়। এরকম অসংখ্য বাপি বা উৎপল আছেন, যারা এমন কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন সাম্প্রতিককালে কলকাতার নিউমার্কেটে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু উড়ালপুল নিচ থেকে লিন্ডসে স্ট্রিট বরাবর যতদূর চোখ যায়, ততদূর শুধু মানুষের মাথার সারি। মার্কুইস স্ট্রিট বা সফর স্ট্রিটেও একই দৃশ্য
একে তো বড়দিন, তার ওপর নতুন বছর। দুইয়ে মিলে বিকেলের পর থেকে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ বলে খ্যাত নিউমার্কেটে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্র, শনিবার বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন। এর সঙ্গে রোববার যোগ করে ভ্রমণ প্যাকেজ বানিয়ে কলকাতায় উৎসব উপভোগ করতে এসেছেন কয়েক হাজার ভ্রমণ পিপাসু বাংলাদেশি।
একই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত পর্যটক এসে পড়ায় অপেক্ষাকৃত দেরিতে আসা পর্যটক হোটেল পাচ্ছেন না। যারা আগে থেকে হোটেল বুকিং করে কলকাতায় পা রেখেছেন, তাদের কথা অবশ্য আলাদা।
অন্যদিকে, ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন নিউমার্কেট এলাকার হোটেল মালিকরাও। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১ হাজার রুপির রুমের জন্য গুনতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে ৩ হাজার রুপি। কোথাও আবার ৭ হাজার রুপি পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ফেলো কড়ি, মাখো তেল!
শনিবার নিউমার্কেট চত্বর, মার্কুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রী স্কুল স্ট্রিট এলাকায় হোটেলের সন্ধানে হন্নে হয়ে ঘুরতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পর্যটকদের।
কেউ কেউ সাংবাদিকের কাছে মুখ খুলতে চাইছেন না, অনেকে আবার নিজের ইচ্ছাতেই নিজেদের হতাশার কথা জানাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে কলকাতায় আসেন নাজনীন সুলতানা। তিনি বলেন, শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় আমরা কলকাতা নিউমার্কেটে এসেছি। এসে দেখি, হোটেল পাওয়া যাচ্ছে না।
‘খুব খুঁজে কোনোমতে একটি হোটেল পাই। কিন্তু এক রাতের জন্য গুনতে হয়েছিল সাত হাজার রুপি। শনিবার সকালে সেখান থেকে একটু কম ভাড়া ও ভালো মানের হোটেলে উঠে পড়ি।’
স্বামীকে নিয়ে নিউমার্কেটে আসা ফরিদপুরের সামসেয়ার বেগমের অভিজ্ঞতা আবার অন্যরকম। দালালকে বেশি পয়সা দিয়ে হোটেল পেতে হয়েছে। কিন্তু পরদিন সকালেই হন্যে হয়ে খুঁজে কমদামের হোটেলে ওঠেন তারা।
সামসেয়ার বেগমের স্বামী মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) আমরা কলকাতায় ঢুকি। এখানে এসে হোটেলের জন্য দালালের শরনাপন্ন হতে হয়। একই সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসার কারণে, এ এলাকার হোটেলগুলোতে রুম পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজু ধারা নামের এক হোটেল মালিক বলেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ এমনিতেই বেশি থাকে। বিশেষ করে এ সময়ের মধ্যে অসংখ্য বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতায় আসেন।
তিনি আরও জানান, হোটেলে এসে রুম না পেয়ে পর্যটকদের ফিরে যেতে হচ্ছে। পর্যটকদের চাপে হোটেলের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দালালচক্রের কথা আমার কানে আসেনি।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানান বাংলাদেশ থেকে আসা অনেকে। সকাল ৮টায় ঢুকে পাসপোর্টে সিল লাগানোসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে বের হতে রাত ৮টা বেজে যাচ্ছে।
নাজনীন সুলতানা বলেন, শুক্রবার ১০টায় সীমান্ত পার করে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে করতে করতে বিকেল ৪টা বেজে যায়। সেখানে প্রায় দশ হাজার মানুষের ভিড়ে, পৌষের ঠান্ডাতেও হিট স্ট্রোক করার মতো অবস্থা হয়ে যায়।
একই অভিযোগ উৎপল সরকারের, বেনাপোল বর্ডারে এসে দেখি প্রচুর জ্যাম। ওখান থেকে বের হতেই আমাদের সাত-আট ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ইমিগ্রেশনেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
অনেকের দাবি, ইমিগ্রেশনে দেরি হওয়ার কারণে, কলকাতা শহরে পৌঁছানোর আগেই বড়দিন বা নতুন বছর উদযাপনের আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটি আরও মসৃণ হলে ভালো হয়।
এসএএইচ
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ রাশিয়ার পক্ষে ছিলেন ম্যারকেল, করেছিলেন ন্যাটোতে ইউক্রেনের বিরোধিতাও
- ২ সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪
- ৩ তুরস্কে গুলি চালিয়ে ৭ জনকে হত্যার পর হামলাকারীর আত্মহত্যা
- ৪ কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ বাংলাদেশি পর্যটকদের
- ৫ যুক্তরাষ্ট্রের সমন জারির পর এবার ভারতের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে মামলা