ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কাতার বিশ্বকাপে ‘প্রকৃত বিজয়ী’ ফিলিস্তিন, লজ্জায় ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর এখনো শেষ হয়নি। তবে এরই মধ্যে আগাম একজনকে চ্যাম্পিয়ন বলে দেওয়া যায়: ফিলিস্তিন। সারা বিশ্বের দর্শকদের হৃদয়ে একের পর এক গোল করে চলেছে দখলকৃত-নিপীড়িত এলাকাটি।

কাতারের স্টেডিয়াম, ফ্যান জোন কিংবা রাস্তাঘাটে অগণিত ফিলিস্তিনি পতাকা, আর্মব্যান্ড ও ব্রেসলেট দেখে, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিন মুক্ত করো) স্লোগান শুনে কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দেশের একটি ফিলিস্তিন। যদিও বাস্তবে সেটি না ঘটছে না। কিন্তু লাতিন আমেরিকার কিছু মিডিয়া সত্যিই ফিলিস্তিনকে টুর্নামেন্টের ‘৩৩তম অংশগ্রহণকারী দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফিলিস্তিনিদের দল না খেললে কাতার বিশ্বকাপে তাহলে বারবার ফিলিস্তিনের নাম উঠে আসছে কেন? কারণ, এই বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি ফুটবলের প্রতি মানুষের আবেগ ভাগ করে নেওয়া এবং বৈচিত্র্য ও মানবিক সংহতি উদযাপনের এক বিশাল সমাবেশও বটে।

jagonews24কাতার বিশ্বকাপে পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি পতাকা। ছবি সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো কোনো আরব দেশে এবার ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই আগের বিশ্বকাপগুলোর তুলনায় এ অঞ্চলের লোকদের কাছে ভৌগলিক, যৌক্তিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে এটি আরও অংশগ্রহণমূলক হয়ে উঠেছে। দমন-পীড়নের ভয় ছাড়াই আরবদের বিপুল সংখ্যায় জড়ো হওয়ার সুযোগ দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। আর তাতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মঞ্চের কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে ফিলিস্তিন।

ফ্রি প্যালেস্টাইন
গত ২৬ নভেম্বর তিউনিসিয়া-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের সময় গ্যালারিতে একটি বিশাল ফিলিস্তিনি পতাকা দেখা যায়। তার একদিন পরে মরক্কো-বেলজিয়াম ম্যাচে দেখা গেছে আরও একটি। এমনকি পরের ম্যাচগুলোতেও ঘুরে ফিরে আসতে থাকে লাল, সবুজ, সাদা, কালো- চার রঙা দৈত্যাকার পতাকাটি।

jagonews24স্পেন-জার্মানি ম্যাচের সময় গ্যালারিতে ফিলিস্তিনি পতাকা। ছবি সংগৃহীত

তিউনিসিয়া-ফ্রান্সের ম্যাচ চলাকালে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে এক তিউনিসিয়ান ভক্ত মাঠের দিকে দৌড়ে আসেন। তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্যালারি থেকে ‘ফ্যালাস্তিন, ফ্যালাস্তিন!’ (ফিলিস্তিনের আরবি উচ্চারণ) স্লোগান শুরু হয়ে যায় তৎক্ষণাৎ।

কানাডাকে হারিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত হলে উদযাপনের সময় মাঠের মধ্যেই ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরেন মরক্কোর খেলোয়াড়রা। স্পেনের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পরও একই কাজ করেন তারা। দোহার আইকনিক সোক ওয়াকিফ বাজারেও মরক্কোর ভক্তদের মুখে শোনা গেছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির সুর।

jagonews24স্পেনকে হারানোর পর মরক্কান ফুটবলারদের হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা। ছবি সংগৃহীত

তবে কেবল আরব দেশগুলোর লোকেরাই ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দোহা মেট্রোয় ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান শোনা গেছে। দোহার রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের দেওয়া পতাকা নিয়ে সংহতি জানিয়েছেন অন্য দেশের মানুষেরাও।

ব্যর্থ ইসরায়েল
কাতারের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ফিফার বাধ্যবাধকতার কারণে ইসরায়েলি নাগরিক ও গণমাধ্যমগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে কাতারি কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলি সরকার সম্ভবত ভেবেছিল, দখলদারদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার বিষয়ে আরবদের কয়েক দশকের পুরোনো নীতি থেকে ইসরায়েল বেরিয়ে আসতে পেরেছে, এমনটি দেখানোর দারুণ সুযোগ এই বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি।

ভক্তরা গণহারে ইসরায়েলি মিডিয়াগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ইসরায়েলিরা পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কয়েক ডজন ভাইরাল ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। লেবানিজ, সৌদি, মরক্কান, মিশরীয়, জর্ডানিয়ান, কাতারি, ইয়েমেনি, তিউনিসিয়ান, ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি জাপানি, ব্রাজিলিয়ান, ইরানি ভক্তরা ইসরায়েলিদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানানোর দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।

jagonews24নেদারল্যান্ডস-কাতার ম্যাচের আগে এক ভক্তের পিঠে ফিলিস্তিনি পতাকা। ছবি সংগৃহীত

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক সৌদি নাগরিক ইসরায়েলি সাংবাদিককে বলছেন, ‘আপনি এখানে স্বাগত নন। যদিও এটি কাতার, তবুও এটি আমাদের দেশ। ইসরায়েল বলে কিছু নেই, শুধু ফিলিস্তিন।’

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইংল্যান্ডের কয়েকজন সমর্থকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন এক ইসরায়েলি সাংবাদিক। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটি (শিরোপা) কি বাড়ি আসছে?’ জবাবে ইংলিশ সমর্থকরা বলেন, ‘এটি বাড়ি আসছে’। ‘কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, ফিলিস্তিন মুক্ত করো!’ চলে যাওয়ার আগে এক সমর্থক ইসরায়েলি মিডিয়ার মাইক্রোফোনে চিৎকার করে বলেন।

এভাবে ইসরায়েলি মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছে যে, তাদের কিছু সাংবাদিক অন্য দেশের নাগরিক সাজার ভান করছেন। তবে বাকিরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এক ইসরায়েলি সাংবাদিক মরক্কান ভক্তদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘আমাদের মধ্যে শান্তি (চুক্তি) আছে, তাই না? আপনারা শান্তিচুক্তিতে সই করেছেন।’ তবু কথা বলতে রাজি হননি সেই মরক্কানরা। চলে যাওয়ার সময় তারা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ইসরায়েল নয়, ফিলিস্তিন।’

অবশ্য চুক্তির কথাটা মিথ্যা বলেননি সেই ইসরায়েলি সাংবাদিক। ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করে মরক্কো, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সুদান। এসব দেশের সরকারের কাছে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিল ইসরায়েলিরা। তা থেকেই হয়তো ভাবনাটা এসেছিল যে, কাতারেও তাদের একই অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টোটা।

ইসরায়েলের মিডিয়াতেই এখন শোনা যাচ্ছে, কাতারে ইসরায়েলিদের অচ্ছুৎ মনে করা হচ্ছে, তারা ইসরায়েল থেকে এসেছে বললে রেস্তোঁরা-ট্যাক্সি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েল ক্রমেই বুঝতে পারছে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেষ্টায় তারা নিজেদের যতটা সফল বলে ভেবেছিল, ততটা হয়নি।

আরবরা সবসময় জানতেন: সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ ও শান্তিচুক্তি কেবল সরকারি কাগজে-কলমে বৈধ, জনগণের কাছে নয়। ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাদের হৃদয় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেই থাকবে।

লেখক: এজে প্লাস চ্যানেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিমা খতিব (অনুবাদ করেছেন খাঁন আরাফাত আলী, জাগো নিউজ)
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/