ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাস

চীনে রেকর্ডসংখ্যক শনাক্ত, ঘনীভূত হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২২

চীনে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এমনকি সংক্রমণ রোধে সরকারের জিরো টলারেন্স বা ‘জিরো কোভিড’ নীতিতেই কাজ হচ্ছে না, বরং প্রতিনিয়তই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ নতুন রেকর্ড স্পর্শ করছে।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) দেশটিতে ৪০ হাজার ৫২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনের সংক্রমণের হিসাবে সর্বোচ্চ। রোববার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৫০৬। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও জিরো কোভিড নীতিতে অটল শি জিনপিং প্রশাসন।

তবে সরকারের এমন একরোখা আচরণে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে। বিশেষ করে লোকডাউন চলাকালে জিনজিয়াংয় প্রদেশের রাজধানী উরুমকির একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় আটকা পড়ে ১০ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ‍উঠেছে।

রোববার (২৭ নভেম্বর) জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ জানায়, উরুমকিতে সোমবার থেকে গণপরিবহন চালু করে দেওয়া হবে। শহরটিতে ৪০ লাখ বাসিন্দা এখনও লকডাউনের আওতায় রয়েছে।

এদিকে শনিবার ও রোববার দেশটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি এদিন বিক্ষোভকারীদের অনেকে প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার সিচুয়ান প্রদেশের রাজধারী চেংদু শহরে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী একত্র হন। সেসময় তারা ‘আমরা চিরদিনের শাসক চাই না, সম্রাট চাই না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

একই দিনে চীনের সবচেয়ে বড় শহর ও বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র খ্যাত সাংহাইয়ে কয়েক হাজার মানুষ জিরো কোভিড বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। তবে পুলিশি দমনের মুখে পড়েন তারা। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

অন্যদিকে, বেইজিং ও নানজিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিরো কোভিড নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সময় শনিবার রাতে সাংহাইয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এসময় তারা শি জিন পিংকে পদত্যাগ ও কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ব ছাড়তে বলেন।

চীনে সরকারবিরোধী যে কোনো আন্দোলনের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই এর আগে দেশটিতে প্রকাশ্যে এমন সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা যায়নি। অনেকের মতে, সাধারণ নাগরিকরা জিরো কোভিড নীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তা বুঝতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সাংহাইয়ের এক বিক্ষোভকারী বলেন, রাস্তায় একসঙ্গে এত মানুষ আমি কখনো দেখিনি। এমন জনস্রোত দেখে আমি যেমন অবাক হয়েছি তেমন উজ্জীবিত হয়েছি। এই লকডাউনের কারণে আমি আমার অসুস্থ মাকে দেখতে যেতে পারছি না। সরকারের এমন আচরণে আমি হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

অপর এক নারী বিক্ষোভকারীর দাবি, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বলেছে, চলমান লকডাউন নিয়ে তারাও (পুলিশ) ক্ষুব্ধ। কিন্তু গায়ে রাষ্ট্রীয় পোশাক থাকায় কিছু করতে পারছেন না। রোববার সাংহাইয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক যুবক বলেন, বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে একটি বাসে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আমরা শুধু আমাদের মৌলিক মানবাধিকার চাই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। তাছাড়া, জিনজিয়াংয়ের দুর্ঘটনা মানুষকে সড়কে নামতে বাধ্য করেছে।

বিক্ষোভকারী এ যুবক আরও বলেন, আমরা কেউই সহিংস নই। এরপরও পুলিশ বিনাকারণে আমাদের আটক করছে।

অনেকের মতে, চীনা নাগরিকদের মধ্যে যেভাবে লকডাউন বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে জিরো কোভিড নীতিতে অটল থাকলে বিক্ষোভ-আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে জিনপিং প্রশাসনের জন্য।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে, সেখানে জিরো কোভিড নীতির কারণে চীন সবধরনের বিধিনিষেধ এখনো জারি রেখেছে। এরপরও প্রতিদিন দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। শনিবারও চীনে প্রায় ৪০ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেখান থেকেই সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস। যদিও করোনার প্রকৃত উৎস কোথায় তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ইকোনমিস্ট

এসএএইচ