ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

বিপজ্জনক স্তরে প্রবেশ করেছে বিশ্ব অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বাজারগুলোর ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে সরকারি বন্ডের দায় বেড়েছে, কমেছে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর। ফলে বাজার শান্ত করার চেষ্টায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। জাপানে ইয়েনের ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজারে (ফোরেক্স মার্কেট) হস্তক্ষেপ করেছে দেশটির সরকার। চীনেও বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ফোরেক্স বাণিজ্যে রিজার্ভ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এই সব অশান্তির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মার্কিন ডলারের লাগামহীন মূল্য এবং বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি। চারপাশে যেদিকেই তাকান, আজ স্বস্তিদায়ক বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে সামান্যই।

বিশ্বের প্রতিটি অর্থনৈতিক বাজারের গঠন ও মেজাজ আলাদা। যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার অর্ধ-শতাব্দীর মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় কর ছাড়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। জাপান বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে গিয়ে সুদের হার সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছে। আর চীনা সরকার লড়ছে তাদের ‘জিরো-কোভিড’ নীতির কারণে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পরিণতির বিরুদ্ধে।

কিন্তু এসব দেশেই কিছু অভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রাই উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ধনী-বিশ্বের একঝাঁক মুদ্রার বিপরীতে ডিএক্সওয়াই বা ডলারের মূল্যসূচক এ বছর ১৮ শতাংশ বেড়েছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি কঠোর মুদ্রানীতি বৈশ্বিক বাজারগুলোকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

গত সপ্তাহে তীব্র অস্থিরতা শুরুর ঠিক আগে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট (বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সংস্থা) জানায়, আর্থিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের প্রতিশ্রুতিতে সুদ বৃদ্ধির হার নির্ধারণ হয়েছে বাজারগুলোর মাধ্যমে এবং মার্কিন সরকারের বন্ড বাজারে তারল্য কমে গেছে।

jagonews24

গত আগস্ট মাসে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারগুলোতে লেনদেন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু তারপরেই এটি এ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। ২০২২ সালে এমএসসিআই অল কান্ট্রি ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স ২৫ শতাংশ নিচে নেমেছে। অন্য বাজারগুলোতেও চাপের লক্ষণ স্পষ্ট। মার্কিন জাংক বন্ডের দায় প্রায় নয় শতাংশে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর করপোরেট বন্ডের দায় দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় শতাংশ, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

করপোরেট কোষাধ্যক্ষ, বিনিয়োগকারী ও অর্থ মন্ত্রণালয়গুলো বৈশ্বিক অস্থিরতার আশঙ্কা করেছিল আগেই। এরপর সংকট আসে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনাও করা হয়। কিন্তু সংকটময় পরিস্থিতি এখন পূর্বাভাসগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।

মাত্র এক বছর আগেই কয়েকজন বিশ্লেষক বিশ্বের অনেক জায়গায় দুই অংকের মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজারগুলো যখন পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ পারফরম্যান্স করতে থাকে, তখন সমস্যা দেখা দেয় এবং নীতিনির্ধারকরা একের পর এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

যেভাবেই হোক মূল্যস্ফীতি কমাতে বদ্ধপরিকর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। গত ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বশেষ সুদের হার বাড়ানোর পরে এর চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য মসৃণ অবতরণের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। তারপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেড প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ব্যাংক অব আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ধনী অর্থনীতিগুলোতে যখন মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের ওপরে উঠেছিল, তখন তা দুই শতাংশে ফিরে আসতে গড়ে ১০ বছর লেগেছিল।

jagonews24

চলমান সংকটের জেরে বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশা দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত নতুন পূর্বাভাসে কয়েকটি ধনী দেশের জোট ওইসিডি জানিয়েছে, এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি মাত্র তিন শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অথচ তাদের গত ডিসেম্বরের পূর্বাভাসেও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছে এই জোট।

এসবের ফলে দ্রব্যমূল্য কমছে। অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি আবার ৮৫ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, যা গত জানুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন। আর গত ২৬ সেপ্টেম্বর লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে তামার দাম দুই মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের পূর্বাভাসও কমিয়ে আনা শুরু করতে পারে। শেয়ারের দামের জন্য ক্রমবর্ধমান সুদের হার যেমন বেদনাদায়ক হয়েছে, নিম্নআয়ের প্রভাবও তেমনটা হতে পারে।

বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সঞ্চয়ে আগ্রহী হওয়ায় সাধারণত মন্দার সময় ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে ডলারের দাম কমবে, এমন সম্ভাবনা কম। সারা বিশ্বের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি অশুভ সংকেত।

(দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অবলম্বনে, অনুবাদ করেছেন খান আরাফাত আলী)
কেএএ/