করোনা মহামারি: কত জীবন রক্ষা করতে পেরেছে ভ্যাকসিন?
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মারা গেছে ৬৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮ জন। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ২১৩ জন। এছাড়া করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ৫৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ২১৩ জন।
করোনাভাইরাসের কারণে যখন মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হলো তখন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই ভ্যাকসিন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে এনেছে বলা যায়।
ইকোনমিস্টের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর কারণে ঠিক কত মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বা মৃত্যু ঝুঁকি কমানো গেছে।
গত ২৩ জুন মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে ওই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওই গবেষণা অনুযায়ী, প্রথম বছর ভ্যাকসিন কার্যক্রমের কারণে ১ কোটি ৯১ লাখ থেকে ২ কোটি ৪ লাখের মতো মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
গবেষণা বলছে, ভ্যাকসিন না নিলে ২০২১ সালে আরও তিনগুণ মানুষের মৃত্যু হতো। এছাড়া কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পাঠানোর উদ্যোগের কারণে ৬৮ লাখ থেকে ৭৭ লাখ মৃত্যু ঠেকানো গেছে।
তবে বিশ্বের কিছু অংশে ভ্যাকসিন এখনও সহজলভ্য হয়নি। ফলে সেসব অঞ্চলে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ৪০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশ। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে ৬ লাখ প্রাণহানি ঘটতে পারে।
এই গবেষণার শেষ ধাপে পৌঁছাতে গবেষক অলিভার জে. ওয়াটসন, গ্রেগরি বার্নসলে এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে তাদের সহকর্মীরা কোভিড সংক্রমণের বিস্তার কিভাবে হচ্ছে তা ট্র্যাক করতে বিদ্যমান একটি ট্রান্সমিশন মডেল দিয়ে শুরু করেছিলেন। তারপর তারা ওই মডেলটিকে দ্য ইকোনমিস্টের মহামারির প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার অনুমানের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন যেন এটা অনুমান করা যায় যে, ভ্যাকসিন ছাড়া এই মহামারি কতটা মারাত্মক হতে পারতো।
তবে প্রতিটি গবেষণার ক্ষেত্রেই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। বিভিন্ন দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ বা মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে গবেষকদের সেসব তথ্যের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে তার বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। যেমন চীনের কাছ থেকে তাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় সরকারি হিসেবের তুলনায় দেশটিতে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কয়েকগুণ বেশি।
এছাড়া যেসব দেশে ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয় সেখানে সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সরকার কিংবা সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের আচরণ-আচরণে পরিবর্তন এনেছেন, গবেষণায় সে বিষয়ে যথেষ্ঠ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু তারপরেও এই গবেষণা থেকে মোটামুটি কিছু ধারণা পরিষ্কার হওয়া গেছে। এটা বলা যায় যে, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে ভ্যাকসিনের অবদান অস্বীকার করা যাবে না।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
টিটিএন/এএসএম