পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ ইন্দোনেশিয়ার, কী করবে ক্রেতারা?
পাম অয়েল রপ্তানিতে ইন্দোনেশিয়ার দেওয়া আচমকা নিষেধাজ্ঞায় বড় সংকটের মুখে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো ক্রেতারা। এরই মধ্যে এর প্রত্যেকটি দেশে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের দাম। নিত্যপণ্যের বাজারে সম্ভাব্য বড় অস্থিরতা ঠেকাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মালয়েশিয়া থেকে আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। তবে বাজারে বিশ্বের বৃহত্তম পাম উৎপাদকের অনুপস্থিতির ঘাটতি মালয়েশিয়া কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে সপ্তাহান্তে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ। একই সমস্যা বাংলাদেশ-পাকিস্তানেও।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পাম তেল ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে। বিশ্বের বৃহত্তম উদ্ভিজ্জ তেল আমদানিকারক ভারতের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাকিস্তান ভোজ্যতেল পরিশোধক সমিতির (পিইওআরএ) চেয়ারম্যান রাশেদ জানমোহাদের মতে, ইন্দোনেশীয় পাম তেলের ঘাটতি পূরণের ক্ষমতা আর কারও নেই। এতে প্রতিটি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় উদ্ভিজ্জ তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় আবারও তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থার মুম্বাই-ভিত্তিক ডিলার জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধিতে তেল পরিশোধকদের কাছে কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। সেসময় দাম কমে আসার আশায় তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম উৎপাদন করছিল। কিন্তু সব তেলের দাম এরপর আরও বেড়ে যায়।
প্রতিকূল আবহাওয়া ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে এমনিতেই ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। এখন ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় ক্রেতা দেশগুলো বিকল্প উৎস খুঁজতে যেমন বাধ্য, তেমনি বাড়তি দামে তেল কেনার দৃশ্যত কোনো বিকল্পও তাদের সামনে নেই।
আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। এতে সারাবিশ্বে পাম, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ সবধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন শিল্প পর্যবেক্ষকরা। এটি জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে এশিয়া এবং আফ্রিকার খরচ-সংবেদনশীল গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তারা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জেমস ফ্রাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সিদ্ধান্ত শুধু পাম অয়েলের নয়, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারও প্রভাবিত করবে।
বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেল কেনাবেচার প্রায় ৬০ শতাংশই হয় পাম অয়েল এবং বৈশ্বিক ভোজ্যতেল রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে শীর্ষ উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া। গত ২২ এপ্রিল দেশটি অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলে পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।
আন্তঃসরকার আলোচনার আহ্বান
ইন্দোনেশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে জিটুজি (আন্তঃসরকার) আলোচনার পরামর্শ দিয়েছে ভারতের ভোজ্যতেল শিল্পের প্রধান সংগঠন সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (এসইএ)। নাহলে এটি ভারতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছে তারা।
এসইএ’র মহাপরিচালক বি ভি মেহতা বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে বলেন, আমরা ভারত সরকারকে ভোজ্যতেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছি। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। কারণ, ভারতে মোট পাম তেলের অর্ধেকই আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং এই ঘাটতি আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। এ বিষয়ে এসইএ ভারতের কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেহতা বলেন, ভোজ্যতেল শিল্প এমন নিষেধাজ্ঞা আশা করেনি। নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার থেকেই দেশীয় বাজারে দাম বেড়ে গেছে। এই খবরে মালয়েশিয়ার তেলের দামও বেড়ে যাবে, যেটি আামাদের অন্যতম প্রধান বিকল্প উৎস।
কেএএ/এএসএম