ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

এশিয়ার বাণিজ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের প্রভাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির কবলে গোটা বিশ্ব। এখনো বহু দেশে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার কারণে থম থম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে ইউক্রেন। এশিয়ার কোম্পানিগুলোর যদিও ইউরোপের চেয়ে দেশ দুটির সঙ্গে কম বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারপরও দেশ দুটির সংঘাতের জেরে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান তেলের দাম ব্যবসা এবং ভোক্তা উভয়কেই প্রভাবিত করবে। শুধু তাই নয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিনিয়োগের মনোভাব এবং ভ্রমণের চাহিদা হুমকির মুখে ফেলেছে। অথচ এশিয়ার কোম্পানিগুলো কোভিড সংকট কাটিয়ে কেবল অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে তৎপর হওয়া শুরু করেছিল।

জেনে নেওয়া যাক, ইউক্রেনে হামলার কারণে এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যে কি কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

তেল ও গ্যাস বাণিজ্যে প্রভাব

সিঙ্গাপুরে ইউনাইটেড ফার্স্ট পার্টনার্সের এশিয়ার গবেষণাবিষয়ক প্রধান জাস্টিন ট্যাং বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে আমদানিকারক দেশগুলো। রাশিয়া থেকে সরবরাহ করা নিয়ে উদ্বেগের কারণে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পুতিনের ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলারে পৌঁছায়। ফলে আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালো এবার।

jagonews24

জানা গেছে, সৌদি আরবের পর অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে রাশিয়া। এটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক দেশও।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ডেইলিএফএক্স-এর সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশেষজ্ঞ মার্গারেট ইয়াং বলেন, রাশিয়ার তেল রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আসতে পারে এবং ইতিমধ্যে বাজারে সরবরাহের সীমাবদ্ধতা যুক্ত হতে পারে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে তেল ব্যবসায়ীরা সতর্ক।

অন্যদিকে কিছু কিছু জ্বালানি সম্পর্কিত কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার তেল এবং গ্যাস কোম্পানি মেডকো এনার্জি ইন্টারন্যাশনালের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি এবং সার্ভিস কোম্পানি ইলনুসার শেয়ারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ এবং পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একেআর’র শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। থাইল্যান্ডের তেল কোম্পানি পিটিআই’র শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

পরিবহন ও পর্যটন খাতে প্রভাব

সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের আকাশসীমা ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ এরই মধ্যে এশিয়ান এয়ারলাইন্সগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। জাপান এয়ারলাইন্স বৃহস্পতিবার টোকিও থেকে মস্কো যাওয়ার ফ্লাইট বাতিল করে। কোম্পানিটির এক মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার আক্রমণের কারণে বিমানটি নিরাপদে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে কি না তা কোম্পানি নিশ্চিত করতে পারেনি। পরে শুক্রবার মস্কো থেকে টোকিও যাওয়ার আরও একটি ফ্লাইট বাতিল হয়। ফলে বিমান শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটট্রেডার২৪ এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার অনেক ফ্লাইটই ইউক্রেনে আকাশপথ ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছে। ইউরোপীয় বহু দেশও ইউক্রেনের ওপর দিয়ে ফ্লাইট চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও জাপান এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম কমেছে ৬ শতাংশ।

jagonews24

ওমিক্রনের প্রভাব কাটিয়ে এশিয়ার কিছু দেশ যেমন থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এখন পর্যটনখাতেও মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ রাশিয়ানদের কাছে থাইল্যান্ড পর্যটন স্পট হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে এক লাখ ৩৩ হাজার ৯০৩ জন পর্যটক ঘুরতে গেছেন দেশটিতে, যাদের মধ্যে ২৩ হাজার ৭৬০ জনই রাশিয়ার।

আইটি খাতে বড় প্রভাব

ইউক্রেন পূর্ব ইউরোপে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার কারণে বর্তমানের সংকটের মুখে প্রযুক্তি খাত। অনেক বিদেশি কোম্পানির সেখানে ঘাঁটি বা অফশোর ডেভেলপমেন্ট পার্টনার রয়েছে, যা দেশের শিক্ষিত অথচ অপেক্ষাকৃত কম খরচে কর্মী কাজে লাগায়। এই সংস্থাগুলো এখন স্থানীয় পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

jagonews24

জাপানি বহুজাতিক সংস্থা হিটাচির মার্কিন সহযোগী গ্লোবাললজিকের ইউক্রেনে প্রায় ৭ হাজার ২০০ কর্মী রয়েছে। হিটাচি সেই কর্মীদের একত্রে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। হিটাচি গত বছরই গ্লোবাললজিক কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে।

জাপানের ই-কমার্স গ্রুপ রাকুতেনও ইউক্রেনে ভাইবার ম্যাসেজিং অ্যাপ চালু করেছে। ফলে তারাও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

খাদ্যশস্য নিয়ে উদ্বেগ

খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখে ইউক্রেন। গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য রপ্তানি করে দেশটি। যদিও এই পণ্যগুলো প্রধানত ইউরোপীয় দেশগুলোতে চলে যায়। তবে সম্ভাব্য সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার ফলে শস্যের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা এশিয়া ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ইউক্রেন, রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং রোমানিয়া কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো থেকে শস্য পাঠায়। সামরিক পদক্ষেপ বা নিষেধাজ্ঞার কারণে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে শস্যের প্রবাহে যে কোনো বাধা খাদ্যের দাম এবং জ্বালানির মূল্যস্ফীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

jagonews24

গত সপ্তাহেও এশিয়ার খাদ্যপণ্য সরবরাহ কোম্পানিগুলো ঘোষণা দেয় যে তাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হয়, প্যাকেজিংসহ লজিস্টিকসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যেরও দাম বাড়ছে। ইউক্রেন সংকট আরও ঘনীভূত হলে এশিয়ার খাদ্য উৎপাদনেও বিরুপ প্রভাব পড়বে।

বাজার গবেষণাকারী ট্রেন্ডফোর্সের মতে ইউক্রেন নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন এবং জেননসহ সেমিকন্ডাক্টরগুলোর কাঁচামাল গ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহকারী দেশ। ৭০ শতাংশ নিয়ন গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের।

স্বল্পমেয়াদে চিপ উৎপাদনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না, কারণ এখনও অন্যান্য অঞ্চল থেকে সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গবেষকরা বলেছেন, গ্যাস সরবরাহ হ্রাস সম্ভবত উচ্চ মূল্যের দিকে নিয়ে যাবে, যা ওয়েফার উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার চিপমেকার এসকে হাইনিক্সের মতো কোম্পানিগুলো বলছে, তারা বিপর্যয় ঠেকাতে প্রস্তুত।

গ্যাস সরবরাহ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ এটির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া আছে, বলছিলেন কোম্পানিটির সিইও। জাপান ও তাইওয়ান রাশিয়ার ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সম্প্রতি। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কি কি থাকছে তা বিস্তারিত বলা হয়নি।

রাশিয়া মূল্যবান প্যালাডিয়াম গ্যাসের একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। এটি অটোমোবাইল নিষ্কাশন বিশুদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। এশিয়ার কিছু দেশ যেমন- জাপান প্যালাডিয়ামের বড় আমদানিকারক। যদি মস্কো এই উপাদানের রপ্তানি সীমিত করে, তবে এর প্রভাব পড়বে এশিয়ার গাড়ি নির্মাণ কারখানায়ও।

নিক্কেই এশিয়া

এসএনআর/জিকেএস