পশ্চিমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিচ্ছে চীন-রাশিয়া
মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত মাসে শান রাজ্যে যখন দেশটির ছয় সশস্ত্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশিরাও। মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে চীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্তত পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন।
মিয়ানমারে অন্তত ২০টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সশস্ত্র ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি গোষ্ঠী শর্তসাপেক্ষে সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে। শান রাজ্যের বৈঠকে যে ছয় গোষ্ঠী অংশ নিয়েছিল, তারা এখনো এ তালিকায় যোগ হয়নি। তবে ওই আলোচনায় চীন মধ্যস্থতা করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
মিয়ানমারে সামরিক বহিনী ক্ষমতা দখল করেছে প্রায় এক বছর হতে চললো। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে পশ্চিমাদের শুধু দূরত্বই বেড়েছে, আর তার সুযোগ নিচ্ছে চীন ও রাশিয়া। গত ২৪ ডিসেম্বর চীনা নৌবাহিনী মিয়ারমারকে একটি পুরোনো সাবমেরিন দিয়েছে পুরোপুরি বিনামূল্যে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খোদ জান্তা সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং।
ছবি: সংগৃহীত
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তখন থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের ওপর একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে পশ্চিমারা মুখ ফিরিয়ে নিলেও জান্তা সরকারের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীনা প্রশাসন। যেমন- মিয়ানমারকে বেশিরভাগ করোনাভাইরাসরোধী টিকা দিয়েছে চীনারা।
মিয়ানমারের প্রতি চীনের এত সহানুভূতি মূলত তাদের সামরিক কৌশলের অংশ। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের মধ্যবর্তী মালাক্কা প্রণালী চীনের আমদানি-রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ রুট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ বাড়লে এ প্রণালী আটকে করে দিতে পারে মার্কিন নৌবাহিনী। তখন বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে সড়কপথে ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি পৌঁছানোর ব্যবস্থা রাখতে চায় চীনারা। এ কারণেই চীনের কাছে মিয়ানমার এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়ানমারের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও দিন দিন চীনাদের প্রভাব বাড়ছে। মিয়ানমার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মাসে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতির কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
মস্কোয় মিন অং হ্লেইংয়ের পাশে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ছবি সংগৃহীত
এছাড়া, মিয়ানমারের সমুদ্রতীরবর্তী শহর কিয়াওপিউয়ে বিশাল বন্দর বানাচ্ছে চীনা কোম্পানি। এ প্রকল্পে চীন পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহে একটি পাইপলাইনের কাজও রয়েছে। চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের কিয়াওপিউ শহরকে সরাসরি যুক্ত করা হবে।
শুধু চীন নয়, পশ্চিমাদের সঙ্গে দূরত্বের সুযোগে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে রাশিয়াও। গত মার্চে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে একমাত্র বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্দার ফোমিন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এরপরও মিয়ানমারে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেছেন। ওই বছরের জুনে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং প্রায় এক সপ্তাহের জন্য রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে মিয়ানমারের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যদি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তাহলে আর কোনো সমস্যাই হবে না।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
কেএএ/এমএস