ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানী ‘নুসানতারা’ নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব প্রান্তের একটি স্থান নুসানতারায় রাজধানী সরিয়ে নিতে বিল পাস করেছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। এটি দেশটির ইস্ট কালিমানতান প্রদেশে অবস্থিত। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপে রাজধানী স্থানান্তর করার বিল পাস হয়। কিন্তু এই বিল পাস হওয়ার পরপরই রাজধানীর নামকরণ থেকে শুরু করে দ্রুত সংসদীয় প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রীয় বাজেট, দুর্নীতির শঙ্কাসহ সমালোচনা চলছে দেশটিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

রাজধানীর নামকরণ নুসান্তারা করায় অনেকে সমালোচনা করছেন বিষয়টির। জাভানিজ ভাষায় নুসান্তারা অর্থ দ্বীপপুঞ্জ। নুসানতারা, সংস্কৃত শব্দ থেকে গৃহীত, যা সমগ্র ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জকেই বোঝায়। অনেকে বলছেন, নতুন রাজধানীর নামটি সমগ্র জাতির সঙ্গে সহজেই বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

একজন টুইট বার্তায় বলেছেন, অনেক দিন আগে থেকে ‘নুসানতারা’ মানে পুরো ইন্দোনেশিয়াকে বোঝায়। আপনি যদি এটিকে রাজধানীর নাম হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে আমার কাছে এটি কিছুটা অদ্ভুত শোনায়।

Nusanatar1

ইন্দোনেশিয়ার সমগ্র দ্বীপপুঞ্জের নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে বোঝাতেই নুসানতারা নামকরণ করা হয়েছে রাজধানীটির। দেশটির জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রী সুহার্সো মনোয়ারফা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো নিজেই এ নামের প্রস্তাব করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার ভৌগলিকত্ব বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে এই নামের মাধ্যমে। তবে সমালোচকরা বলছেন, সেখানে নতুন শহর নির্মাণের কর্মকাণ্ডের ফলে পাম চাষিদের বিস্তার ঘটবে। সেই সঙ্গে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও সবুজ চিরহরিৎ অরণ্যও ঝুঁকিতে পড়বে।

বোর্নিও দ্বীপের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠীও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সরকারের এই পদক্ষেপে সেখানকার পরিবেশ ও তাদের সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে।

তবে বিতর্ক শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি। রাজধানী স্থানান্তরের জন্য যে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয় গত ৭ ডিসেম্বর সেটি মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে সংসদে বিল হিসেবে উত্থাপন হয় এবং পাস হয়। সমালোচকরা বলছেন, জনসাধারণের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত বিল পাস করা হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে জাভা ইন্দোনেশিয়ার পূর্ববর্তী সরকারগুলোর উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ফলে ছোট ছোট ঘনবসতির দ্বীপগুলো অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক পেছনে পড়েছিল। বিলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া প্রোসপারিয়াস জাস্টিস পার্টির (পিকেএস) সংসদ সদস্য হামিদ নুর ইয়াসিন অভিযোগ করেন বিলটি অতি দ্রুত পাস করা হয়েছে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা না করেই।

জনাকীর্ণ, দূষিত এবং ধীরে ধীরে সাগরে তলিয়ে যাওয়া রাজধানী জাকার্তাবাসীকে মুক্তি দিতেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা এর আগেই জানিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। আইনের সর্বশেষ খসড়া অনুযায়ী, নতুন রাজধানীর প্রস্তুতি, উন্নয়ন এবং স্থানান্তরকে গুরুত্ব দিয়ে ১০ বছরের জাতীয় অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশটির সরকারের বরাদ্দকৃত জায়গায় বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি অফিস এই ১০ বছরের মধ্যে তাদের সব ধরনের স্থাপনাসহ অন্যান্য জিনিস স্থানান্তর করতে পারবে।

Nusanatar1

রাজধানী পরিবর্তনের এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইন্দোনেশিয়া সরকারকে ৪৬৬ ট্রিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করতে হবে। যদিও জাকার্তায় এক ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেই বছরে একশ ট্রিলিয়ন রুপিয়া খরচ হয়ে যায় দেশটির। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এতো বড় বাজেট নিয়েও আছে দুর্নীতির শঙ্কা ও সমালোচনা। করোনা মহামারির কারণে যেখানে বহু সমস্যা রয়েছে দেশটিতে। তবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার।

জানা গেছে, মহামারির আগে, প্রকল্পটি আবুধাবি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং সফটব্যাংক গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইওর মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের নজরে এসেছিল। কিন্তু তাদের সম্ভাব্য অংশগ্রহণের কথা আর বলা হয়নি।

ভবিষ্যতের রাজধানীর নতুন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, আইকেএন.জিও.আইডি-তে দেখা যায় যে, বাজেট নিয়ে কিছু তথ্যও মুছে ফেলাও হয়েছে বির্তক সৃষ্টির পর।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

এসএনআর/এমএস