ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

নির্বাচনী ব্যস্ততার বছর ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:২৭ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

গণতন্ত্র ইস্যুতে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা ও বিতর্ক জিইয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। চীনকে চাপে রাখতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথিত ‘গণতান্ত্রিক সম্মেলন’ আয়োজন করেন। যেখানে বিশ্বের ১০০ দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই আয়োজনে এড়িয়ে যাওয়া হয় চীনকে। যদিও এই সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলে বেইজিং।

এশিয়ার কোনো কোনো দেশকে চালাচ্ছে ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার’। গত বছর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। এছাড়া কম্বোডিয়ার তিন যুগের স্বৈরশাসক হুন সেন তার ছেলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও বলেছেন।

যদিও গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এখন ‘আপেক্ষিক’ বানিয়ে ফেলেছে রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো, তবু সারাবিশ্বে এখনো গণতন্ত্রের প্রধান প্রতীক হিসেবে নির্বাচনকেই ধরা হয়। এর পাশাপাশি সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নাগরিক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও বিবেচনায় ধরতে হয়।

গণতন্ত্রের দেশগুলোতে এ বছর বেশ কয়েকটি নির্বাচন হতে চলেছে। যার মধ্যে ভারত, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের নামও আছে।

ভারত
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে আগামী ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। এই রাজ্যটিতে দেশটির বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তথা ২০ কোটি লোকের বসবাস। বছরের প্রথম ধাপে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হবে আরও কয়েকটি রাজ্যে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এখানে বিরোধী দলগুলোর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও উত্তরপ্রদেশে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি বলছে, এখানকার ফল ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে শক্তিশালী তাদের ভিত্তি গড়ে দেবে। মোদির ঘনিষ্ঠ পরামর্শক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত অক্টোবরের শেষের দিকে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দিল্লি (ফেডারেল সরকারের আসন) যাওয়ার রাস্তা লখনউর (উত্তরপ্রদেশের রাজধানী) মধ্য দিয়ে গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ মার্চ। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী লি জায়ে মিউং সাম্প্রতিক জরিপ মতে এগিয়ে আছেন। তার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন প্রধান বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির প্রার্থী ইউন সুক-ইওল। সাবেক কৌঁসুলি ইউন পপুলিস্ট ধারণার পরিবর্তে আইন ও নীতির মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিপরীতে গিয়াংগি প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর লি দেশের আমূল পরিবর্তনের কথা বলছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সরকারের আবাসন নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। হিসাব মতে, গত কয়েক বছর ধরে বাড়ির মূল্য দ্বিগুণ বেড়ে গেছে দেশটিতে। তবে করোনা মোকাবিলায় সফল হওয়ায় ৪০ শতাংশ মানুষ এখন সমর্থন করে ডেমোক্র্যাটদের।

ফিলিপাইন
দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইনে আগামী ৯ মে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের ছয় বছরের শাসনের পর ফিলিপিনোদের পরিবর্তনের ক্ষুধার ব্যারোমিটার হবে এই নির্বাচন। মাদক নির্মূল অভিযানের নামে সন্দেহভাজন বহু লোককে হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন, চীনবান্ধব বিদেশি কূটনীতির কারণে ম্যানিলার সঙ্গে ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যে ছেদ সংকুচিত করতে পারে দুতের্তের ভাগ্যকে।

অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং তার লিবারেল-ন্যাশনাল জোটকে এই ভোটে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন জরিপ বলছে, এখনই নির্বাচন হলে তারা হেরে যেতে পারে৷ যদিও ২০১৯ সালে জয়ের পর মরিসন বলেছিলেন, আমি ‘অলৌকিকতায়’ বিশ্বাস করি। তবে করোনা ঠেকাতে সাফল্য দেখিয়েছে মরিসন সরকার। দেশটিতে ৭৫ শতাংশ মানুষ করোনার দুটি টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন। এখন চলছে বুস্টার ডোজ নেওয়ার কার্যক্রম। তবে ওমিক্রন আতঙ্কে আবারও বিধিনিষেধ জারি রয়েছে দেশটিতে। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণের দেশ অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ওপর নজর থাকবে চীনের।

জাপান
জাপানের সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ জুলাইয়ের আগে। এর আগে গত অক্টোবরের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে দারুণ জয় পেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। ডিসেম্বরে এক জরিপের ফলাফল বলছে, কিশিদার জনপ্রিয়তা এখন ৬৫ শতাংশ। আর গত নভেম্বরে বিরোধী কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে জয়ী কেনতা ইজুমির জনপ্রিয়তা ৩৮ শতাংশ। এই দুজনের জনপ্রিয়তার হার প্রভাব ফেলতে পারে ফলাফলে।

কম্বোডিয়া
চলতির বছরের ৫ জুন নির্বাচন হবে কম্বোডিয়ায়। সেখানে তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হুন সেন আবারও জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও হুন সেন সম্প্রতি তার ছেলের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন।

তাইওয়ান
তাইওয়ানে নির্বাচন হবে নভেম্বরে। এই নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হবে ২২টি নগরীতে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ভোটের আভাস মিলবে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন তার দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত মেয়াদ শেষ করছেন এবার। সুতরাং নতুন নেতা নির্বাচিতহবে এবার তাইওয়ানে।

মালয়েশিয়া
২০২৩ সালের জুলাইয়ে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা নয়। তবু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার সাক্ষী দেশটিতে এ বছরও মধ্যবর্তী ভোট হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। সেনাপ্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া প্রায়ুথ চান-উচা তার মেয়াদ ভালোভাবে শেষ করার কথা বলেছেন। যদিও এবছরই নির্বাচন হওয়ার জল্পনা কল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে। একই সঙ্গে ভোট ব্যবস্থায়ও আসতে পারে পরিবর্তন।

ফ্রান্স
২০২২ সালে শুধু এশিয়ার দেশ নয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জি-৭ ভুক্ত ফ্রান্সেও। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ এপ্রিল। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নানা সমালোচনা সত্ত্বেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মধ্যবর্তী নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেনের অভ্যন্তরীণ নানা কর্মসূচি বাধার মুখে পড়তে পারে, যদি প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনিটে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ফাইভ থার্টিএইট নামে একটি সংস্থা জরিপ বলছে, রিপাবলিকানরা এমন জয় পেতে পারে। উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য তাদের শুধু একটি সিনেট আসন এবং পাঁচটি প্রতিনিধি পরিষদ আসন প্রয়োজন। বাইডেনের অনুমোদন রেটিং এখন ৪৩ দশমিক ১। কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ বাইডেনের অনুমোদন রেটিং অকেজো করে দিতে পারে।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

এসএনআর/এইচএ/জেআইএম