আফ্রিকার বৃহত্তর অর্থনীতির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
বিশ্ব অর্থনীতিতে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ২০২২ সালেও নজরে থাকবে এই অঞ্চলের দেশগুলো। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বিপরীতে এসব দেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ২০২১ সাল জুড়ে কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতার কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় গোটা বিশ্বের মানুষ যখন টিকার দুই ডোজ সম্পন্ন করার স্বস্তি পাচ্ছে তখন ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আফ্রিকায় টিকা পেয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ। সুতরাং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যখন প্রকৃতিগতভাবে করোনা সংক্রমণ কমবে তখন বিভিন্ন খাতে উন্নয়নে আফ্রিকার নিজেদের অনেক সুযোগ তৈরি এবং সম্ভাবনা রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড (আইএমএফ) আভাস দিয়েছে যে, সাব-সাহারান অঞ্চলের বর্তমান যে অবস্থা তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ২০২২ সালে শূন্য দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ দশমিক ৮য়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া এবং অ্যাঙ্গোলা একসঙ্গে সাব-সাহারান আফ্রিকার জিডিপির প্রায় অর্ধেক। ওই অঞ্চলও কোভিড-১৯ এর আগে গভীর সংকটের মধ্যে ছিল। ২০২২ সালেও এই সংকট অব্যাহত থাকবে। রুয়ান্ডা ও সেশেলস পুনরায় সক্রিয় হবে এবং প্রবৃদ্ধির আকার হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ যা, আইভরি কোস্ট এবং ঘানার মতো মাঝারি আকারের অর্থনীতির দেশগুলোর মতো।
সাব-সাহারান আফ্রিকার বড় অর্থনীতিতে কি ভুল ছিল? এক নাইজেরিয়ার দিকে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি গভীর নিরাপত্তা সংকটে জর্জরিত। বোকো হারাম এবং অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলো উত্তর-পূর্বের পরিবেশকে আতঙ্কিত করছে। উত্তর-পশ্চিমের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা মানুষকে অপহরণ করে এবং কৃষকদের তাদের ক্ষেতে প্রবেশে বাধা দেয় এবং চাঁদাবাজি করে।
সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। সরকার স্কুল ও বাজার বন্ধ করে রেখেছে এমনকি বোমা হামলার শঙ্কায় উত্তর-পশ্চিমের অনেকাংশে টেলিকম নেটওয়ার্ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের সরকারকে সহযোগিতা করতে বাধা দেওয়া হয়। ফলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কৃষকদের ওপর। অচল হয়ে পড়ে ব্যবসা বাণিজ্য।
নাইজেরিয়ার অর্থনীতি জ্বালানি তেলের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ২০১৫ সালের পর থেকে এর জিডিপি প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অনিয়মিত নীতি-নির্ধারণ সবই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। তবে তেলের দাম বৃদ্ধি ২০২২ সালে দেশটির জন্য সুখবর আনতে পারে। তবে তেল বিক্রির অর্থ ফিরে আসলে রাজনীতিকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমে যাবে।
অ্যাঙ্গোলাও তেলের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণকারী দেশটির প্রেসিডেন্ট জোয়াও লরেনকো বৈচিত্র্য আনতে চান, তবে এতে সময় লাগবে। আপাতত ক্রমবর্ধমান তেলের দাম পাঁচ বছরের মন্দার পরে পুনরুদ্ধারকে একীভূত করতে সাহায্য করতে পারে। চীনের কাছে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কাজ করলেও দেশটির স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামের পেছনে মূলত তেল দায়ী নয়। স্বজনপ্রীতি পুঁজিবাদ (রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বড় বড় ব্যবসা ও প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়া), বিদ্যুতের ঘাটতি, স্বল্প বিনিয়োগ, মহামারি আঘাত করার আগে দুই বছরের মধ্যে একে দ্বিতীয় মন্দায় ফেলেছিল। করোনার কারণে ৩০ শতাংশ বেকার হয়েছে। কয়েক দশকের দুর্নীতির কারণে ক্ষোভ এবং ব্যর্থ অর্থনীতি জুলাইয়ে গিয়ে দাঙ্গার ইন্ধন যোগায়।
খনি শিল্প সমৃদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উজ্জ্বল অর্থনীতির আশা তাদের খননের জন্য উচ্চ মূল্যের উপর নির্ভর করে। কিন্তু গভীর সমস্যা সমাধান করতে আরও বেশি সময় লাগবে।
তবে আইএমএফ বলছে, ২০২২ সালে রুয়ান্ডার প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে থাকবে যা দেশটির জন্য ভালো খবর। বেনিনের উচিত ৬ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছানো। সেসেলশ পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে হয়তো ৮ শতাংশে পৌছাবে। ঘানা, আইভরি কোস্ট এবং সেনেগাল তাদের দ্রুত মহামারির পূর্বের অবস্থানে যাওয়া দরকার। শুধু তেল বা খনি থেকে নয়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটার মাধ্যমে এটি সম্ভব।
নাইজেরিয়ানরা উল্লেখ করতে চায় যে শুধু লাগোসের অর্থনীতিই ঘানার চেয়ে বড়। তবুও আইএমএফ বলছে যে, ঘানার অর্থনীতি ২০২১ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। যেখানে নাইজেরিয়ার হবে দুই দশমিক ছয় শতাংশ। যদিও এটি সবকিছু ঠিক করে না। ২০২২ সালের দিকে বড় দেশগুলোর উন্নয়নের কারণে প্রত্যাশা বাড়বে প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোরও।
আফ্রিকার দেশগুলো এখনও অর্থনৈতিক অবস্থান শক্ত করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাড়ছে ঋণের বোঝা। এর প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে। তবুও আশা করা হচ্ছে, বিপুল কর্মঠ জনগোষ্ঠী ঋণ ব্যবস্থাপনা থেকে দারিদ্র্য হ্রাস পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে ২০২২ সাল একটি পার্থক্য তৈরি করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা একটি উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ। সেখানে ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে শেষ বারের মতো জিডিপি ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এসএনআর/টিটিএন/জিকেএস