ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

এ বছর স্বাভাবিক গতিধারায় ফিরবে বিশ্ব অর্থনীতি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২২

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। ২০২০-২০২১ সালজুড়েই ছিল করোনার প্রকোপ। দেশে দেশে টানা লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় স্থবির হয় আর্থিকখাত। তৈরি হয় অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। এর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এমনকি উন্নত সমৃদ্ধ দেশের অর্থনীতিতেও পড়ে প্রভাব। যে সব দেশের অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অর্থনৈতিক অচলাবস্থা ও করোনার টানা বিধিনিষেধে অনেক দেশেই হয়েছে বিক্ষোভ ও সরকার বিরোধী আন্দোলন। করোনার চিকিৎসা ব্যয় ও টিকার ব্যবস্থা করতে অনেক দেশ হিমশিম খায়। ২০২১ সালজুড়ে টিকার বৈষম্যও ছিল চরমে। যা নিয়ে হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সব দেশই পরিস্থিতি সামাল দিতে ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেয় নানামুখী পদক্ষেপ।

মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে দেশগুলো যখন সংগ্রাম করছিল ঠিক তখনই আসে মুদ্রাস্ফীতি ও করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। বিশেষ করে ওমিক্রনের জেরে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিশ্বনেতাদের চোখে-মুখে। নতুন করে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওমিক্রনের জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ফের লকডাউনে ফিরতে বাধ্য হয়েছে অনেক দেশ।

২০২১ সালের শেষের দিকে এসে মুদ্রাস্ফীতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা পরিণত হয়। দেশে দেশে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপের কিছু দেশে এ সমস্যা ছিল প্রকট। তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।

অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও সরবরাহ বিপর্যয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এর ফলে ৪০ বছরে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) সর্বোচ্চ স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশটির শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বেড়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ১৯৮২ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ।

অন্যদিকে বিশ্বের তেলের বাজারও ছিল চরম অস্থিতিশীল। ২০২১ মাঝামাঝি এসে দেশে দেশে বেড়ে যায় তেলের দাম। তবে ওমিক্রনের জেরে ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের পদক্ষেপে শেষের দিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে তেলের দাম।

সব মিলিয়ে দেখা গেছে, ২০২১ সালের অর্থনীতি ছিল খুবই নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে ২০২২ সালের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে। নতুন বছরেও কি অর্থনীতি খারাপভাবে যাবে? অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি ও করোনার প্রভাব কি ২০২২ সালেও থাকবে? পর্যটনসহ সেবাখাতগুলো কি স্বাভাবিক হবে?।

ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি ২০২২ সালেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ২০২২ সালের প্রথম দিকে থাকতে পারে মুদ্রাস্ফীতি। যদিও ২০২০ সাল থেকেই বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ও অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাড়া বা কমা সাময়িক সময়ের জন্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের নীতি নির্ধারকরা বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন। ব্যাংগুলোতে সর্বোচ্চ সুদের পরেও কেন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দরগুলো কেন উন্মুক্ত হচ্ছে না, সমস্যা রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থায়ও। অন্যদিকে মহামারিও শেষ হচ্ছে না। ২০১১ যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতি ছিল পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। তারপরও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার কম রেখেছিল। সে সময় ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ হার বেশি করে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছিল।

মুদ্রাস্ফীতির কারণে ২০২২ সালে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। করোনার মহামারিতে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়াই ২০২০-২০২১ সালের বৈশ্বিক বাণিজ্যের একমাত্র সমস্যা ছিল না। এসময় বেড়ে গিয়েছিল চাহিদা ও অর্থনৈতিক উদ্দীপনা। বেড়ে ছিল মদের চাহিদাও। যুক্তরাষ্ট্রে মহামারির আগে থেকেই চাহিদা বেড়েছে শারীরিক ব্যায়ামের সরঞ্জামের।

economy2.jpg

বলা হয়, ২০২২ সালে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করতে হলে ভোক্তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে। দুর্ভাগ্যবশত পরিষেবা শিল্পের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের অভাব রয়েছে। এখাতে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে।

অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় আনতে হলে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে নজর দিতে হবে। তাছাড়া পণ্যের দাম কমানো প্রয়োজন। বাড়াতে হবে উৎপাদন, নজর দিতে হবে কম মুনফায়।

আর্থিক নীতি নির্ধারকরা সুদের হার বাড়াচ্ছেন এবং অনুশোচনা করছেন এটা সহজেই বোঝা যায়। যদিও ২০২২ সালের দিকে মুদ্রাস্ফীতি বেশিই থাকবে। তবে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা মনে করছেন, উচ্চ সুদের হারের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে ছয় মাস বা এক বছর সময় লাগতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো করোনার মহামারি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ভাইরাসটি আগামীতেও অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। করোনার নতুন ধরনটি টিকার কার্যকারিতাকেও ফাঁকি দিতে পারে। যা হতে পারে অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম/এমএস