ইউরোপে ফের করোনার দাপট, তীব্র হচ্ছে আন্দোলনও
ইউরোপে করোনার হানা নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ঢেউয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিএইচও)। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ইউরোপে ৫ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকরা আবারও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছেন। কিন্তু তা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ।
করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে দেশে দেশে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নেদারল্যান্ডসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় সম্প্রতি তিন সপ্তাহের লকডাউন ও বিধিনিষেধ জারি করে ডাচ সরকার। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে ভ্যাকসিন পাস নিয়ে চলাফেরা বাধ্যতামূলক ও নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে দেশটিতে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষও। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) নেদারল্যান্ডসের রোটেরডাম শহরে কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। এ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালায়। এসময় পুলিশের গুলিতে আহত হন ৭ জন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ২০ জনকে। শনিবারও (২০ নভেম্বর) বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান কয়েকশ মানুষ। পুলিশের সদস্যরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে হেগ শহরের রাস্তায় কিছু বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে পটকাও ছুড়ে মানেন তারা। পরে শহরটিতে জরুরি আদেশ ঘোষণা করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা টুইটারে জানান, শনিবারের সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৭ জনকে। এখনও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে।
করোনা সংক্রমণ রোধে বেলজিয়ামেও মাস্ক ব্যবহারের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগে থেকেই রেস্তোরাঁর মতো জায়গায়গেলে করোনা পাস লাগতো। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিকাংশ বেলজিয়ানিদের সপ্তাহে চার দিন বাসায় থেকে অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে। গত বুধবার নতুন করে এ ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে সব স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনার টিকা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এসব বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। রোববার (২১ নভেম্বর) করোনার বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে রাজধানী ব্রাসেলসে হাজার হাজার মানুষ এক পদযাত্রায় অংশ নেয়। এসময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘটে সংঘর্ষের ঘটনাও। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে। জানা গেছে, ওই কর্মসূচিতে ৩৫ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ফ্রান্সের ক্যারিবিয়ান দ্বীপ গুয়াদেলুপে রোববারও (২১ নভেম্বর) করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। পরে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় বাড়তি পুলিশ পাঠায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিরাল্ড ডারমানিন বলেন, বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
ফ্রান্স সরকার রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার স্থান এবং ভ্রমণে কোভিড পাসের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মূলত এই কোভিড পাসের প্রতিবাদের গুয়াদেলুপে বিক্ষোভের সূচনা হয়। বিচ্ছিন্ন ওই দ্বীপটিতে চার লাখ মানুষ বাস করছেন।
এছাড়া করোনার বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে ক্রোয়েশিয়া ও ইতালিতেও।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আজ সোমবার (২২ নভেম্বর) থেকে নতুনভাবে লকডাউনে যাচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া। ২০ দিন ধরে অস্ট্রিয়াজুড়ে কার্যকর থাকবে লকডাউন। কয়েক দিন আগে দেশটিতে যারা টিকা নেয়নি তাদের ওপর লকডাউন আরোপ করা হয়। নিয়মানুযায়ী, সবাইকে বাড়িতে থেকে কাজ করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ রাখতে হবে। তবে শিশুদের স্কুল খোলা থাকবে। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ নিয়ম চলবে বলে জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট
এসএনআর/জেআইএম