দিল্লির কৃষক আন্দোলনে নিহতদের ‘অস্থি কলস’ যাচ্ছে রাজ্যে রাজ্যে
আগরতলা সংবাদদাতা
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিজেপি সরকারের রোষানলে নিহত কৃষকদের ‘অস্থি কলস’ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের নদী মোহনায় ভাসানো হচ্ছে।
গতকাল শনিবার নিহত কৃষকদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের ‘অস্থি কলস’ দেশের সব জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নদীর মোহনায় ভাসাতে পাঠিয়েছে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন সংযুক্ত কিষান মোর্চা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাল ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়ও এসে পৌঁছায় ‘অস্থি কলস’।
ওইদিন সংযুক্ত কিষান মোর্চা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের নেতৃত্বে গত প্রায় এক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন বানচাল করতে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এরই মধ্যে অপপ্রচার, কুৎসা, মিথ্যা রটনা, আন্দোলনস্থলে পুলিশের মাধ্যমে প্রাচীর তোলা, পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করা এবং কৃষকদের ওপর শারীরিকভাবে অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
এসময় সংগঠনটির আহ্বায়ক পবিত্র কর বিজেপি সরকারের এমন ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, দিল্লির কৃষক আন্দোলন বানচাল করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। সভ্যতার কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটাতেও কার্পণ্য করেনি তারা। আগামীতেও কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, গত ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির নৃশংস কৃষক হত্যার ঘটনা অতীতের সব নৃশংসতাকে ছাপিয়ে গেছে। সেদিন সংযুক্ত কিষান মোর্চার চার কৃষক নেতাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব-পরিকল্পিত চক্রান্তেরই অঙ্গ। কারণ, এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি সরাসরি জড়িত। তার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং তার ছেলে আশিস মিশ্র টেনি ও তার সহযোগীরা গাড়িচাপা দেয় চার কৃষক নেতাকে। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এক সাংবাদিকও নিহত হন। এ ধরনের ঘটনা সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রনোলজি মিলিয়ে নিলে দেখা যাবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে হরিয়ানা সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকার সংযুক্ত কিষান মোর্চার আন্দোলনকে নানাভাবে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছে। গত ২৮ আগস্ট এর প্রমাণ মেলে। হরিয়ানার কারনাকালে গত ২৬ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খটটর নিজেই কৃষকদের ওপর লাঠিচার্জ করতে মানুষকে উসকে দেন। এরপর অবশ্য জেলে গিয়ে হিরো সাজার অভিনয়ও করেন তিনি। এরই রেশ ধরে গত ২৮ আগস্ট কারনালের মহকুমা শাসক আয়ূস সিনহার নির্দেশে পুলিশ কারনালের কৃষকদের ওপর পূর্বঘোষিত আন্দোলনে লাঠি চালায়। সেখানে কৃষক নেতা সুশীল কাজলকে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আহ্বায়ক বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর আসামের দরং জেলার ধোলপুরেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার উসকানিতে সেখানকার এক পুলিশ সুপারের ছোটভাইয়ের নির্দেশে আরও দুজন কৃষক সাদ্দাম হুসেন ও শেখ ফরিদকে পুলিশ নৃশংসভাবে খুন করেছে। এর বিরুদ্ধেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। এরপরই ঘটে লখিমপুরের ঘটনা। যেখানে শহীদ হন কৃষক আন্দোলনকারী নেতা গুরবিন্দার সিং (১৯), লভপ্রিত সিং (২০), দলজিৎ সিং (৩৫), নাছাত্তার সিং (৬০) এবং কর্তব্যরত সাংবাদিক রমন কাশ্যপ।
তিনি জানান, শহীদদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার আগেই সংযুক্ত কিষান মোর্চা সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করে। একইসঙ্গে সরকারকে বাধ্য করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেফতার করতে। যদিও বিজেপি সরকার তাকে বাঁচাতে সচেষ্ট রয়েছে।
এদিকে শহীদ কৃষকদের ‘অস্থি কলস’ ত্রিপুরা ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়ও যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মতিলাল সরকার, ডা. যুধিষ্ঠির দাস, সাবেক মন্ত্রী গোপাল দাস ও সিদ্দিকূর রহমান প্রমুখ।
এমকেআর/জেআইএম