নতুন নিরাপত্তা জোটে ভারতকে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই: যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গড়া নতুন নিরাপত্তা জোটে (এইউকেইউএস) ভারত, জাপান বা এ ধরনের আর কোনো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন প্যাসকি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। থাকছেন ভারত-জাপানের মতো কোয়াড জোটভুক্ত দেশের সরকারপ্রধানরাও। এই সুযোগে শুক্রবার কোয়াডের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হওয়ার কথা।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জেন প্যাসকির কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, কোয়াড জোটের বৈঠকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ভারত-জাপানও উপস্থিত থাকবে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো এশিয়ার এ দুটি দেশের সঙ্গে একই ধরনের নিরাপত্তা চুক্তি করার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না মার্কিনিদের।
এর জবাব দেওয়ার আগে কিছুটা মজার সুরে হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি বলেন, এইউকেইউএস তাহলে কী দাঁড়াবে? জেএইউকেইউএস? জেএআইএইউকেইউএস?
এরপর তিনি বলেন, গত সপ্তাহে এইউকেইউএস’র ঘোষণা কোনো সূচনা হওয়ার কথা নয়। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) ম্যাক্রোঁর (ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ) কাছেও এই বার্তাই দিয়েছেন যে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের নিরাপত্তায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো আর কেউ নেই।
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে নতুন নিরাপত্তা জোট গড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দেশের সরকারপ্রধান যৌথভাবে এ জোটের ঘোষণা দেন। মূলত ওই অঞ্চলে চীনের প্রভাববৃদ্ধি মোকাবিলায় এ জোট গড়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জোটের চুক্তি অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরিতে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। কিন্তু বিতর্কের ঝড় শুরু হয় মূলত ফ্রান্সকে ঘিরে।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ডিজেলচালিত সাবমেরিন কিনতে কয়েকশ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেটি বাতিল করেই পারমাণবিক শক্তিচালিত অত্যাধুনিক সাবমেরিন তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে অজি সরকার।
এতেই ক্ষেপেছে ফ্রান্স। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লে দ্রিয়াঁ এটিকে সরাসরি ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়েছিলাম, সেটি ভাঙা হয়েছে।
তবে ফ্রান্সের মূল ক্ষোভটা গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর । এভাবে ‘একতরফা’ চুক্তি করায় বাইডেনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনা করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেছেন, মিত্রদের সঙ্গে অন্তত এমনটি করতে হয় না।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় ফ্রান্স। কথা ছিল, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক হবে। কিন্তু ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে সেই বৈঠকও বাতিল করা হয়।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন জো বাইডেন। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবর অনুসারে, বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে ফোন করেছিলেন বাইডেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কথা হয়েছে তাদের।
ম্যাক্রোঁকে বাইডেন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সাবমেরিন চুক্তি করার আগে তাদের ফ্রান্সের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। এবার ভুল হলেও ভবিষ্যতে তা অবশ্যই করা হবে। বাইডেনের এই ‘সরল স্বীকারোক্তি’তেই বরফ গলেছে প্যারিসের।
বাইডেনের সঙ্গে কথা বলার পর ম্যাক্রোঁ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূতকে আবার ফেরত পাঠানো হবে। আগামী সপ্তাহেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
কেএএ/জিকেএস