হিজাব পরা বন্ধ হলে জয়ী হবে ট্রাম্প
লাস ভেগাস বললেই চোখের সামনে ভাসে মদ, জুয়া আর যৌনতায় ভেসে যাওয়া এক শহরের ছবি। এ রকম একটা শহরে ইসলামের উপস্থিতি অনেকের কল্পনারও বাইরে। কিন্তু নেভাডার ইসলামিক সোসাইটি বলছে, এই মরুর দেশেও আছে ছয়টি মসজিদ আর এখানে বসবাস করে তিরিশ হাজার মুসলিম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশে মুসলিমদের ঢোকা নিষিদ্ধ করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে উদ্বিগ্ন এই শহরের মুসলিমরাও।
বাসের জানালা দিয়ে লাসভেগাসের ঝলমলে নিয়ন বাতি দেখছেন ১৯ বছর বয়সী তালিবাহ আবদুল ওয়াহিদ। মাথায় হিজাব পরা তালিবাহকে এই বাস জার্নিতে মাঝে মধ্যেই মুসলিম বিদ্বেষী আচরণের মুখে পড়তে হয়।
সাধারণত আমি যখন খুব ভোরবেলা বা অনেক রাতে বাসে উঠি, তখন অনেক সময় অন্যযাত্রীরা আমার পাশে বসতে চায় না। লোকে ফিসফিস করে আমাকে নিয়ে কথা বলে, ও কি কাপড়ের নীচে বোমা লুকিয়ে রেখেছে? ও কি আমাদের ক্ষতি করতে পারে? আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো লোকজন এই আগুনে আরও ঘি ঢেলেছেন।
রিপাবলিকান দলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে লাস ভেগাসের মুসলিমরা কতটা উদ্বিগ্ন? তালিবাহ বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরি, তখন মনে হয়, এটাই কি আমার শেষ বাড়ি যাওয়া? আমার পরিবার, বা বন্ধুদের সঙ্গে এটাই কি আমার শেষ দেখা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই মন্তব্যে তালিবাহর মতো আরও অনেক মুসলিমই এখন ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন ট্রাম্প এই বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষকে উস্কে দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বারনারডিনোতে এক আইএস দম্পতির সন্ত্রাসী হামলায় ১৪ জনকে হত্যা করার পর, এরকম ঘটনা বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করছেন মুসলিমরা। অথচ এখানকার মুসলিমরাও এই ঘটনার নিন্দা করতে এখানকার আরও সব সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক মুসলিম মহিলা বলেন, আমি একজন আমেরিকান, আমি একজন নারী, এবং আমি একজন মুসলিম। আমেরিকার সংবিধান আমাকে সুরক্ষা দেয়। আমি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে জন্মাইনি। কিন্তু তারপরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে অধিকার, একজন মুসলিম হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মহিলা হিসেবে, আমারও সেই অধিকার। এই স্বাধীনতা যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দ না হয়, তিনি এদেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
লাস ভেগাসের সাবুর মসজিদের ইমাম ফাতিন সাইফুল্লাহ বললেন, আমার মনে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করেছেন, তা হলো, বর্ণবাদী হওয়াটাকে তিনি বৈধ করেছেন। লোকজনের বর্ণবাদী আচরণ এবং গোঁড়ামিকে তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন। লোকে এখন মনে করছে, তারা যা করছে ঠিক করছে, কোন একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের বিরুদ্ধে বৈষম্য করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তার এই মন্তব্যের পর আমাদের জন্য সবকিছু সত্যিই বদলে গেছে।
কিন্তু এই বদলে যাওয়া আমেরিকায় তারপরও হার মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তালিবাহ আবদুল ওয়াহিদের মতো মুসলিমরা। তালিবাহর ভাষায়, যদি আমরা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি না করি, হিজাব পরা বন্ধ করি, তাহলে তো ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মানুষেরাই জয়ী হয়। বিবিসি।
এসআইএস/পিআর
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ রাশিয়ার পক্ষে ছিলেন ম্যারকেল, করেছিলেন ন্যাটোতে ইউক্রেনের বিরোধিতাও
- ২ সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪
- ৩ তুরস্কে গুলি চালিয়ে ৭ জনকে হত্যার পর হামলাকারীর আত্মহত্যা
- ৪ কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ বাংলাদেশি পর্যটকদের
- ৫ যুক্তরাষ্ট্রের সমন জারির পর এবার ভারতের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে মামলা