ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের
ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সত্যিই খুব আশঙ্কাজনক। একের পর এক সংক্রমণ আর মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে করোনায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নরেন্দ্র মোদির দেশ। কোনভাবেই যেন দেশটিতে করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না।
গত কয়েকদিন ধরেই টানা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
ভারতের এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারত সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ভারতকে সবরকম সাহায্যের চেষ্টা করছেন তারা।
এক বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভারতের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখে আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত। আমাদের সহযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। আমরা খুব দ্রুত ভারত এবং ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছি।
রোববার সকালে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ১৭২।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৬৭ জনের, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছেই। অপরদিকে বিভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানী দিল্লির পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সাহায্যের জন্য ২৪ ঘন্টা কাজ করছে। ভারতে যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা আমাদের বন্ধু দেশ ভারতের জন্য সবরকম সাহায্য করব এবং মেডিকেল সরঞ্জাম, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ থেকে ভ্যাকসিন দ্রুত সরবরাহের কাজ করব।
ইউএস চেম্বার্স অব কমার্সের কার্যনির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইরন ব্রিলিয়ান্ট জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে বিশ্বের কয়েকটি দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ডোজ এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী ওষুধ রফতানির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সহায়তা চেয়ে সম্প্রতি একটি বিবৃতি জারি করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এরপরই মার্কিন চেম্বার্স অব কমার্সের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, কঠিন এই পরিস্থিতিতে রফতানি নিশ্চিতের চেষ্টা করা হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল, দেশের সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরই হয়তো ভারতে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল রফতানি করতে পারবে তারা।
এর আগে ভারতের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস। তিনি ভারতের এ পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে ফের করোনা সংক্রমণে তিনি উদ্বিগ্ন। ভারতের এই পরিস্থিতিই বিধ্বংসী অনুস্মারক বা পূর্বাভাস দিচ্ছে যে ভাইরাস কী করতে পারে। অর্থাৎ ভারতে ক্রমাগত যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ তা রীতিমতো ভয়ানক আকার নিতে চলেছে বলেই মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচও প্রধান।
টিটিএন/এমকেএইচ