রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত : বাকযুদ্ধ চরমে
রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা নিয়ে তুরস্ক, রাশিয়া এবং এ দেশ দুটির মিত্রদের মধ্যে বাকযুদ্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে সিরিয়া সংঘাতে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বাড়তি উত্তেজনাও দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালের দিকে তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘনের দায়ে রুশ যুদ্ধবিমান সুখোই এসইউ-২৪ এ গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করে আঙ্কারা। এ ঘটনার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনাকে পিঠে ছুরি মারা বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে সন্ত্রাসীদের সহযোগীদের কাজ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুতিন বলেন, সিরিয়ার আকাশ থেকেই বিমানটিতে গুলি চালিয়ে নিচে নামানো হয়েছে। কেননা এটি তুরস্ক সীমান্ত থেকে চার কিলোমিটার দূরে সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে বিধ্বস্ত হয়েছে। সেই সময় যুদ্ধবিমানটি এবং পাইলটরা তুরস্কের জন্য কোনো ধরনের হুমকি ছিল না।
ভূপাতিত বিমানটির দুজন পাইলট প্যারাশুট দিয়ে মাটিতে নেমে আসলেও একজন সিরিয়ায় তুর্কমেন বাহিনীর জিম্মায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিখোঁজ পাইলটদের সন্ধানে রাশিয়ার সামরিক হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে আকাশে টহল দিচ্ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুরোধে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত বিদ্রোহীরাই রুশ হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা। কিন্তু মস্কো এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। সিরিয়ায় মস্কোর অভিযানের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ না করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সঙ্গে আলোচনা করায় তুর্কি প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছেন পুতিন। এদিকে, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু বলেছেন, সীমান্ত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে যে কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে আঙ্কারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, তুরস্কের আকাশসীমা এবং স্থলসীমা লঙ্ঘনকারী যে কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা আমাদের আন্তর্জাতিক অধিকার এবং জাতীয় দায়িত্ব। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে তুরস্ক কোনো ধরনের দ্বিধা করবে না।
যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করায় তুরস্কের সঙ্গে সেনা সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। একই সঙ্গে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের তুরস্ক সফরও বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনার পর রাশিয়ার নাগরিকদের নিরাপত্তার কারণে তুরস্ক ভ্রমণে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ তুরস্কের পাশে থাকার কথা বলেছেন। ন্যাটো সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় তুরস্কের অধিকার রয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওই ঘটনা সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য পাননি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়া যদি পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালানো বন্ধ করে তাহলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
এসআইএস/আরআইপি