নতুন উত্তেজনায় রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন এক গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছে মস্কো।
ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই প্রতিবেদন সামনে আসার পর বেশ ক্ষেপে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খুনি এবং রাশিয়ার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য তাকে মূল্য দিতে হবে বলে অভিযোগ তোলেন জো বাইডেন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আনতোনোভকে মস্কোতে ডেকে পাঠানোর কথা ভাবা হয়। যে কোনো সময় তাকে নিজ দেশে তলব করা হতে পারে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ১৫ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তপেক্ষপের অভিযোগ তোলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জো বাইডেন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে।
এর আগে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো। এমনকি এবারের মার্কিন প্রতিবেদনও তারা অস্বীকার করেছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বেন আনতোনোভ। তিনি মস্কো ফিরে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অ-বিবেচক বিবৃতি ইতোমধ্যেই দু'দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বুধবার অপর এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দু'দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এমনকি ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিদেশি নেতার মধ্যে একজন ছিলেন পুতিন। কিন্তু বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সেই চিত্রটা পাল্টে গেছে।
বুধবার এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাইডেন বলেন, নিশ্চিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে মূল্য দিতে হবে বলে তিনি পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এবিসি নিউজের জর্জ স্টিফেনোপোলাসের কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাকে মূল্য দিতে হবে। তিনি জানান, পুতিনের সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে। সে সময় তিনি বলেছেন, ‘আপনি (পুতিন) আমাকে চেনেন এবং আমিও আপনাকে চিনি। এমন কিছু ঘটেছে সেটা যদি নিশ্চিত হই তবে এর জন্য প্রস্তুত থাকবেন।’
এর আগে ২০১৮ সালের মার্চে রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ে সালিমবুরিকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া রুশ সরকারের বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকেও সম্প্রতি বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘটনা পুতিনের নির্দেশে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও বার বারই তা অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
বাইডেন কি বিশ্বাস করেন যে পুতিন একজন খুনি? এসব প্রসঙ্গ তুলে জানতে চাওয়া হলে বাইডেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি তিনি একজন খুনি।’
এদিকে, পুতিনের সমালোচক এবং দেশটির বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ এবং তাকে আটকে রাখার ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোও মস্কোকে চাপে রেখেছে। পশ্চিমা দেশগুলো নাভালনিকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু রাশিয়া বলছে, তারা এক্ষেত্রে বাইরের হস্তক্ষেপ মানবে না।
টিটিএন/জিকেএস