ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারের প্রতি চীনের এত টান কীসের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব যখন সরব, তখন অনেকটা দায়সারা বিবৃতি দিয়েই শান্ত চীন। দেশটি বলেছে, মিয়ানমারে কী ঘটছে তা নাকি তারা বোঝার চেষ্টা করছে! অর্থাৎ, এ বিষয়েও বরাবরের মতো মিয়ানমার সেনাদের পাশে রয়েছে চীনারা। কিন্তু দেশ দু’টির এত ঘনিষ্ঠতার কারণ কী? মিয়ানমারের প্রতি চীনাদের কীসের এত টান?

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী। চীনাদের মিয়ানমার-প্রেমের পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন তিনি।

প্রথমত, মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনের স্বার্থ। দ্বিতীয়ত, চীনের গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সম্পৃক্ততা।

ড. মাহমুদ আলীর মতে, চীন বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল। মূলত এগুলোর জন্যই রোহিঙ্গা সংকটের মতো ইস্যুগুলোতে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে না।

china-2.jpg

তিনি বলেন, মিয়ানমারে চীনের অনেক দশকের বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে ষাটের দশক থেকে মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন এবং সম্প্রতি যে রাজনৈতিক দলীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের সঙ্গেও চীনাদের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর কারণ অবশ্য মিয়ানমার নয়, এখানে চীনের বিশাল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক স্বার্থ রয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগরের মালাক্কা প্রণালী দিয়ে চীনের ৮৫ শতাংশ তেল-গ্যাস সরবরাহ হয়। ওই এলাকাটি শত্রুভাবাপন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকায় চীনাদের সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

চীনের ভয়, এই প্রণালী নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে যেকোনো সময় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেজন্যই তারা মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং অন্য দেশগুলোর মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহের একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছে।

মিয়ানমারের যে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের জোর-জবরদস্তি করে বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই রাজ্যের উপকূলেই চাউথিউ নামে একটি বন্দরে সম্প্রতি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে চীন। চীনাদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা তেল-গ্যাস এই বন্দরে নামানো হয়।

china-2.jpg

এই তেল-গ্যাস সরবরাহের জন্য চীন গত কয়েক বছর ধরে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে চাউথিউ বন্দর দিয়ে দুটি পাইপলাইন বসিয়েছে এবং এজন্য মিয়ানমারকে প্রচুর অর্থ দিতে হয়েছে তাদের। ওই পাইপলাইন দিয়ে আমদানি করা তেল ও জ্বালানি গ্যাস চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে যায়।

পাইপলাইনটির যেন কোনো ক্ষতি না হয় এবং জ্বালানি তেল-গ্যাসের সরবরাহ যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে, সেজন্য চীন কিছুটা মিয়ানমার সরকারের কাছে দায়বদ্ধ বলে মনে করেন মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলী।

তিনি বলেন, এই পাইপলাইন যেহেতু রাখাইন রাজ্যের ভেতর দিয়ে গেছে, তাই ওই অঞ্চলে যেন মিয়ানমার সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকে, সেটাও চীনাদের স্বার্থের মধ্যে পড়ে। একারণেই মিয়ানমার সরকার যখন দাবি করছে, আরাকানি বিদ্রোহীরা তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ওই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে, তখন চীন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারছে না।

কেএএ/এমএস