মেয়ের কষ্ট সইতে না পেরে বৃদ্ধ দম্পতির আত্মহত্যা
স্কুলশিক্ষিকা মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বছর খানেক আগে। এর মধ্যে আবার পোস্টিং অনেক দূর। যাওয়া-আসা করতে অনেক কষ্ট হয়। মেয়ের এসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক বৃদ্ধ দম্পতি আত্মহত্যা করেছেন।
কলকাতা বেহালার জেমস লং সরণির একটি ফ্ল্যাট থেকে রোববার (১০ জানুয়ারি) সকালে অচেতন অবস্থায় ওই দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মৃত দম্পতির নাম প্রদ্যোৎ লাহিড়ী (৭৩) ও প্রণতি লাহিড়ী (৬৮)।
মৃত্যুর আগে তার সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন, ‘মেয়ের অনেক দূরে স্কুলে পোস্টিং। নিজে কষ্ট করে আমাদের দেখাশোনা করছে। ওর জীবনযন্ত্রণা আমরা সহ্য করতে পারলাম না। চললাম।’
তাদের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে, দুজনেই অত্যধিক মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। যে কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তারা মারা গেছেন। এ নিয়ে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, খবর, গত শনিবার ওই দম্পতির একমাত্র মেয়ে, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা মধুমিতার জন্মদিন ছিল। রাতে তার জন্মদিন পালন করেছিলেন বৃদ্ধ বাবা-মা। মেয়ের জন্য নিজের হাতে কেক বানিয়েছিলেন প্রণতিদেবী। এরপর পাশের ঘরে ছেলেকে নিয়ে শুতে চলে যান মধুমিতা। অন্য ঘরে ঘুমাতে যান ওই দম্পতি। পরের দিন, রোববার সকালে মধুমিতা উঠে মা-বাবাকে ডাকতে গেলে দেখেন, বিছানায় অচেতন অবস্থায় তারা পড়ে আছেন। তার চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা প্রদ্যোৎবাবু বেহালার জেমস লং সরণির একটি আবাসনের দোতলায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। পুলিশ বলছে, বছর খানেক আগে তাদের মেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল। তারপর প্রায় দুই বছর ধরে তার সাত বছরের পুত্রসন্তানকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটেই থাকেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, সুন্দরবনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন মধুমিতা। সে জন্য প্রতিদিন তাকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। মেয়েকে নিকটবর্তী কোনো স্কুলে বদলি করানোর জন্য প্রদ্যোৎবাবু অনেক তদবির করেছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ফলে একদিকে মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ, অন্য দিকে চাকরির জন্য প্রতিদিন দীর্ঘ পথ যাতায়াত— এসব আর সহ্য করতে পারছিলেন না তারা। তাই মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোটে তারা মেয়ের এই জীবনযুদ্ধের যন্ত্রণার কথাই লিখে গিয়েছেন।
এমএসএইচ/জেআইএম