মহামারিতে বিশ্বজুড়ে যেভাবে পালিত হচ্ছে ‘অন্যরকম’ বড়দিন
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ আর আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আট কোটি। মহামারির কারণে বিশ্বজুড়েই মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম ব্যাহত হয়েছে। সেই প্রভাব পড়েছে উৎসবগুলোতেও। ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের মতো খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে অনেকটাই সীমিত পরিসরে।
বেথেলহেম
যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান ফিলিস্তিনের বেথেলহেম নগরে এবার খুব স্বল্প সংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বড়দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। তবে নগরের নেতারা জানান, তারা আশার বাণী প্রচারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।
ক্রিসমাস ট্রি’র পাশে দাঁড়িয়ে বেথেলহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান বলছিলেন, ‘লোকজনের চলাফেরা ও সামাজিক যোগাযোগে বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু এটা বড়দিন, আর বড়দিন মানুষের মনে ভালো সময়ের আশা জাগায়।’
লেবানন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান। অর্থনীতিতে গতি আনতে লেবানিজ সরকার মহামারির অনেক বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে। বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে এবার ১০ হাজারেরও বেশি লেবানিজ বিদেশ থেকে দেশে পৌঁছেছে। লেবাননে সাধারণত বেশ বড় পরিসরেই বড়দিন পালিত হয়।
যুক্তরাজ্য
সম্প্রতি করোনার নতুন এক ধরন পাওয়া যাওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ব্রিটিশ সরকার। বিভিন্ন দেশও যুক্তরাজ্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস হওয়ায় যুক্তরাজ্যে বড়দিন বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বড়দিনের দুপুরের খাবার শেষে যারা কিছু পড়তে চান তাদের জন্য এটা (ব্রেক্সিট চুক্তি) একটা ছোট্ট উপহার।’
জার্মানি
বড়দিন উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের বাসায় না গিয়ে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানাতে দেশের নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। বড়দিন উপলক্ষে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে দেশটির সরকার। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন লকডাউন আগামী ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। লকডাউনের আওতায় নিত্য প্রয়োজনীয় নয় এমন দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবার এক করুণ বড়দিন পালন করছে। রাজনৈতিক নেতারা লোকজনকে ভ্রমণ ও জমায়েতে সতর্ক থাকতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ- সিডিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশটিতে ইতোমধ্যে ১০ লাখ নাগরিককে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে।
চীন
চীনের উত্তরপূর্বের বন্দর নগর দালিয়ানের লাখ লাখ অধিবাসীদের করোনা পরীক্ষা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন সাতজন শনাক্ত হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দু’জন ব্যক্তির মধ্যে করোনা লক্ষণ দেখা দেয়ায় ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করেছে বেইজিং।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বড়দিন উপলক্ষে অধিবাসীদের সীমিত পরিসরে চলাফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে কিছু পরিবার সেখানে লকডাউনে রয়েছে। উৎসবে সর্বোচ্চ ১০ জনের বেশি অতিথির জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পর সমগ্র অস্ট্রেলিয়া থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে সিডনি।
ব্রাজিল
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোরানোর বড়দিনের বার্তায় করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। চীনের সিনোভ্যাক ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে ভ্যাকসিন আমদানি করছে ব্রাজিল। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া সরাসরি ভাষণে বলসোরানো বলেন, ‘সাও পাওলোতে দেয়া এই ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বেশ কম বলে দেখা গেছে।’ যদিও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় ও আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
এমকে/জেআইএম