ভারতে কৃষক আন্দোলন: বল এখন সরকারের কোর্টে
মোদি সরকারের নতুন তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আগামী ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। টানা নবম দিন দিল্লির সঙ্গে হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ অন্য রাজ্যগুলোর সংযোগপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তারা।
গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারতে এত বড় পরিসরে কৃষক আন্দোলন আর হয়নি। এই সংকট মেটাতে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও সরকার পক্ষের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। কৃষকরা আইন বাতিলের দাবিতে অনড়, সরকারও আইনগুলো কৃষকদের স্বার্থে হয়েছে, তা বোঝাতে ব্যর্থ।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কৃষকরা সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন। সেগুলো মধ্যে ছিল- এপিএমসি ব্যবস্থার বাইরে শস্য বিক্রির অনুমতি, চুক্তিভিত্তিক কাজ, মজুত সীমাবদ্ধতা বাতিল প্রভৃতি।
সরকারের সঙ্গে কৃষকদের বিরোধের অন্যতম ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন আইনে কৃষি সংক্রান্ত মামলাগুলোতে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) কোর্টকে সর্বোচ্চ বিচারালয় হিসেবে উল্লেখ করা। কৃষকদের দাবি, তারা অভিযোগ নিয়ে যেন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেন। বিরোধ রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়েও।
সবশেষ বৈঠকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কিছুটা নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এপিএমসি ও বেসরকারি বাজারগুলোতে সমান কর, বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, কৃষকদের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যাওয়াসহ বেশি কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
এসব নিয়ে শনিবার আবারও আলোচনায় বসার কথা রয়েছে দুই পক্ষের। এদিন স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বৈঠকে বসবেন মোদি সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা।
আলোচনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার শনিবার সকালে প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসায় গিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের বৈঠক সফল না হলে মোদি সরকারের সামনে আরও বড় সংকট হানা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার রাতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে মিলিত হয়েছে ৪০টি কৃষক ইউনিয়ন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দাবি পূরণ না হলে দিল্লির সব প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হবে। এমনকি ভারতের সব মহাসড়কের টোল গেটও দখল করবে কৃষকরা।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্য শুরু থেকেই তার সরকারের নতুন আইনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বৃহস্পতিবার টানা সাত ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বলেছেন, এখানে সরকারের কোনও ইগো নেই। আলোচনার জন্য তাদের দরজা সবসময় খোলা।
কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়ে এপর্যন্ত অন্তত তিনজন মারা গেছেন। মৃত দুই কৃষকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক পাঁচ লাখ রুপি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাঞ্জাব সরকার।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া
কেএএ/