ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ভারতের ‘টেস্ট অ্যান্ড ট্রেসিং’ কৌশল কী কাজে লাগছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৪২ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘করোনা টেস্ট ও কন্টাক্ট ট্রেসিং’কে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ভারতে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, তবে উদ্বেগের বিষয় এই যে বিভিন্ন পরীক্ষার কৌশলগুলো মহামারি এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ভারত কী ধরনের পরীক্ষা করছে?
ভারত এতদিন পিসিআর পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যাপকহারে ব্যবহার করে আসছি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিকেই সবচেয়ে মানসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে এখন এই পরীক্ষার হার ৬০ শতাংশে নেমেছে। অনেক ভারতীয় রাজ্যের নিজস্ব নীতিমালা তৈরির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা দ্রুত তবে কম নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষার (আরএটি) দিকে ঝুঁকেছেন।

India-1

আরএটি পরীক্ষায় ভুলভাবে অনেককে নেগেটিভ হিসেবে দেখনোর কারণে (যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায় না) ৫০ শতাংশ আক্রান্ত বাদ পড়ে যায় বলে জানা গেছে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই পদ্ধতি এখনও সেই সব অঞ্চলে কার্যকর যেসব অঞ্চলগুলোর ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠেছে।

হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গৌতম মেনন এ প্রসঙ্গে বলেন, আরটিএ পদ্ধতিতে শনাক্তের ক্ষমতা কম সংবেদনশীল এবং পিসিআর পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে নির্ভরযোগ্য।’

তবে করোনা শনাক্তকরণে এসব পদ্ধতির ব্যবহার ভারত যে একা করছে তা নয়, তৃতীয় দফায় দ্রুত সংক্রমণ বৃদ্ধিতে কিছু ইউরোপীয়ও দেশও মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে দ্রুত পরীক্ষা পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে।

India-2

সারাদেশে পরীক্ষা কি ধারাবাহিকভাবে চলছে?
বিবিসির প্রতিবেদনে এর উত্তরে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, না চলছে না। ভারতে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। দেশটির মোট কোভিড-১৯ রোগী ১৭ শতাংশই পশ্চিমে আরব সাগর সংলগ্ন এই রাজ্যটির বাসিন্দা।

মোট করোনায় আক্রান্তের ক্ষেত্রে এর পরই রয়েছে যথাক্রমে কম জনসংখ্যার রাজ্য কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডু এবং কেরালা। তবে অধিক জনসংখ্যা নিয়েও বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্য দুটিতে করোনায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। দশ কোটিরও বেশি মানুষেল রাজ্য বিহারে এই হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে উত্তরপ্রদেশে তা ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে করোনা পরীক্ষার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ; উভয় ক্ষেত্রে (এবং আরও কিছু রাজ্য) মোট পরীক্ষার ৫০ শতাংশের কম হয়েছে পিসিআর পদ্ধতিতে। সুতরাং অনেক আক্রান্ত বাদ পড়ে গেছেন।

মহারাষ্ট্রে প্রায় ৬০ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পিসিআর পদ্ধতিতে। তবে প্রাদেশিক রাজধানী মুম্বাইয়ে তা কম। কারণ ভারতের এই বাণিজ্যিক রাজধানীতে অ্যান্টিজেনের মতো দ্রুত পরীক্ষা পদ্ধতির সংখ্যা বাড়ছেই।

তবে দক্ষিণের তামিলনাড়ু রাজ্যে করোনার সব নমুনাই পরীক্ষা করা হচ্ছে পিসিআর পদ্ধতির মাধ্যমে। ফলে ওই রাজ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি এবং ভাইরাসটির বিস্তার সম্পর্কে আরও সঠিক ধারণাই রয়েছে রাজ্যটির।

India-3

সমস্ত রাজ্যজুড়ে পরীক্ষামূলক স্তর
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এমনও প্রমাণ রয়েছে যে, রাজ্যগুলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার যেসব জনবহুল অঞ্চলে ঊর্ধ্বমুখী সম্ভবত সেসব রাজ্যে কম করে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

যেমন গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মোট আক্রান্তের ১৩ শতাংশ প্রাদেশিক রাজধানী লক্ষ্নৌর বাসিন্দা। তবে রাজ্যটির মোট নমুনা পরীক্ষার মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশের কম হয়েছে সেখানে।

উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলায় রাজ্যটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ রাজ্যটিতে যতগুলো করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এর মাত্র ৩ শতাংশ করা হয়েছে কানপুরে।

জেলাভিত্তিক তথ্যে বিহারেও এমনটাই দেখা গেছে। সবচেয়ে জনবহুল এলাকার একটি রাজধানী পাটনায় যেখানে রাজ্যটিরে মোট করোনা রোগীর ১৮ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে সেখানে মোট নমুনা পরীক্ষার হার ৩ শতাংশ।

রাজ্যটির অন্যান্য অংশেও তুলনামূলকভাবে বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা কম।

জনস্বাস্থ্য নীতিবিদ ডঃ রিজো জন বিবিসিকে বলেন, ‘যেসব এলাকায় আক্রান্ত বেশি সেখানে যদি পরীক্ষা কম হয় ঠিক একইরকমভাবে যেখানে আক্রান্ত কম কিন্তু পরীক্ষা বেশি হয়; তাহলে সবশেষে আক্রান্ত দেখা যাবে যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে কম, কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াবে তুলনায় অনেক বেশি।’

India-4

নজরদারি ব্যবস্থার পার্থক্য
ভারতের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হিসেবে কেউ শনাক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টার মধ্যে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে।

কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পর্কিত ভারতের সংসদীয় কমিটি আবার বলছে যে, করোনার আশঙ্কাজনক সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য প্রধান কারণগুলো হতে পারে ‘দুর্বল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং কম নমুনা পরীক্ষা।’

তবে করোনার কনট্যাক্ট ট্রেসিং নিয়ে প্রতিটি রাজ্য থেকে বিশ্বাস করার মতো তথ্য পাওয়াটা দুষ্কর। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উচ্চ ঝূঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্রুত এবং পদ্ধতিগত কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য উত্তরপ্রদেশের প্রশংসা করেছে।

বিপরীত দিকে আবার কর্ণাটকের পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যটিতে প্রাথমিত ও মাধ্যমিক পর্যায়ে করোনার কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত রয়ছে।

এদিকে তেলেঙ্গানার রাজ্য সরকারের দেয়া এ সংক্রান্ত তথ্যেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দেখা যাচ্ছে, সেখানেও গত সেপ্টেম্বর থেকে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের সংখ্যা কমতে শুরু হওয়ার পর তা কেবল কমছেই।

এদিকে কেরালা রাজ্য সরকারের দেয়া হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের (কনট্যাক্ট ট্রেসিং) শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৮০ শতাংশ হয়েছে বেধে দেয়া সময়ের পর। আরও আশ্চর্য্যের বিষয় হলো এই যে, দেশটির অনেক রাজ্য এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করছে না।

এসএ/পিআর