ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যেভাবে এখনও জয়ী হতে পারেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২০

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েকদিন। তার আগে দেশটির বিভিন্ন সংস্থার জরিপে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন।

তার এই এগিয়ে থাকার চিত্র দেখা যাচ্ছে জাতীয় পছন্দের ক্ষেত্রে এবং দেশটির প্রধান প্রধান কিছু সুইং স্টেট বা ঝুলন্ত রাজ্যেও। সুইং স্টেটের ভোটাররা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কাকে ভোট দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু জরিপে সুইং স্টেটগুলোতে জো বাইডেনের সমর্থন বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে।

রেকর্ড গড়া তহবিল সংগ্রহের কারণে ডেমোক্র্যাট শিবির বিশাল আর্থিক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে; একেবারে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা ভালোভাবেই চালাতে পারবেন জো বাইডেন।

ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে এবার হেরে যাবেন বলে ইলেক্টোরাল বিশ্লেষকদের অনেকেই তাদের মতবিরোধ বাড়িয়ে তুলেছেন। সম্প্রতি নির্বাচনী মতামত জরিপকারী ওয়েবসাইট ফাইভ থার্টি এইট ডট কম বলছে, জো বাইডেনের জয়ী হওয়ার ৮৭ শতাংশ সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, আরেক নির্বাচনী জরিপ সংস্থা ডিসিসন ডেস্ক এইচকিউ বলছে, বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে এসব জরিপ ডেমোক্র্যাটদের জন্য অনেক সময় বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। চার বছর আগের নির্বাচনের সময়ও হিলারি ক্লিনটনকে এভাবেই সব জরিপে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। তার জয়ের ব্যাপারে একই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি উল্টে যায়।

ট্রাম্পের আরেকটি জয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কি ঘটতে পারে? আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফের শপথ নিয়ে মসনদে বসতে পারেন? এমন কিছু কি ঘটার সম্ভাবনা আছে? চলুন ট্রাম্পের ফের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ জেনে নেয়া যাক।

আরেকটি অক্টোবর বিস্ময়

২০১৬ সালের নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক জেমস কোমি ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার এক সপ্তাহ ধরে মার্কিন গণমাধ্যমের শিরোনামে ঠাঁই পান হিলারি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা চলে জোরালভাবে।

চলতি বছরের নির্বাচনের দুই সপ্তাহের অল্প কয়েকদিন আগে একই ধরনের একটি রাজনৈতিক কম্পন জাগানো ঘটনা ট্রাম্পের জয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলতি মাসে ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বিস্ময় তার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং আয়কর ফাঁকির ঘটনা।

তবে নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে রহস্যময় এক ল্যাপটপে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ই-মেইলে অবৈধ লেনদেনের যোগাযোগের আলামত মিলেছে বলে জানানো হয়েছে সম্প্রতি। নির্বাচনী প্রচারণা কম্পন জাগানোর জন্য এই ঘটনাটি যথেষ্ট হলেও নির্দিষ্ট প্রমাণ এবং তথ্য-প্রমাণের অভাবে ভোটারদের কাছে তেমন সাড়া ফেলতে পারছে না।

তবে কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও অনেক কিছু আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি নতুন কোনও বিতর্কের জন্ম হয় এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জো বাইডনের বেআইনি কাজের তথ্য-প্রমাণ সরাসরি হাজির করেন, তাহলে সেটি হবে ভিন্ন ধরনের একটি বড় খবর। যার সুবিধা ভোটের মাঠে পড়তে পারে ট্রাম্পের ঝুলিতে।

জরিপ মিথ্যা হলে

ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে বিভিন্ন মতামত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। এমনকি প্রধান প্রধান সুইং স্টেটগুলোতেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে। তবে জো বাইডেন এসব রাজ্যেও এগিয়ে আছেন।

এছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মতো অনেক আমেরিকান ই-মেইলে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। রিপাবলিকানরা ই-মেইল ভোটে ভয়াবহ জালিয়াতির আশঙ্কা প্রকাশ করে তা ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাট শিবির বলছে, রিপাবলিকানরা মূলত ভোটারদের দমনের পায়তারা করছে।

ভোটাররা যদি ফরম সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারেন অথবা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেন কিংবা মেইল পৌঁছাতে বিলম্ব অথবা বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়, তাহলে বৈধ ব্যালটও বাতিল হয়ে যেতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারে নির্বাচনী কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মী অথবা কর্মকর্তার উপস্থিতি থাকবে সীমিত। মহামারিতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহও কমতে পারে। ফলে অনলাইন কিংবা টেলিফোনের জরিপের ফলও উল্টে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

বিতর্ক

দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে ট্রাম্প এবং বাইডেনের প্রথম বিতর্ক হয়। সেই বিতর্কে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তীব্র বাক-বিতণ্ডা এবং আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চালান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই সেই বিতর্কে বেশি নোংরা ছড়িয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে বয়স্করা একটি প্রধান জনগোষ্ঠী হলেও ট্রাম্প তাদের বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দেননি। অন্যদিকে, বাইডেন এই উদ্বিগ্ন ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন। প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী জো বাইডেনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ, অপমান, এমনকি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেন।

বিপরীতে পাল্টা জো বাইডেনও ট্রাম্পকে ভাঁড় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দেন। মার্কিন গণমাধ্যমে এই বিতর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণে আপাত দৃষ্টিতে জো বাইডেনই জয়ী হয়েছেন বলা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রথম বিতর্কের নেতিবাচক ধারণা বদলে দিতে পারতেন দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নিয়ে। কিন্তু সেটি ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। তবে সেই সুযোগ তৈরি হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার। ওই দিন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তৃতীয় বিতর্কে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। নিজের হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করে অবস্থান সুদৃঢ় করার সুযোগ নিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ঝুলন্ত রাজ্যের ধাক্কা

মতামত জরিপে জো বাইডেন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও দেশটির বেশ কিছু রাজ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এগিয়ে আছেন অথবা কাছাকাছি রয়েছেন। যদি প্রেসিডেন্টের জন্য সবকিছু সঠিকভাবে এগোয় এবং ইলেক্টোরাল কলেজের হিসেব-নিকেশ তার পক্ষে যায়, তবে আগামী ৩ নভেম্বরে নির্বাচনে জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের পপুলার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে স্বস্তিজনক অবস্থানে থাকায় সেটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। উইসকনসিন এবং মিশিগানের মতো ঝুলন্ত কিছু রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে এ বছর সেটি কঠিন হতে পারে।

তিনি যদি পেনসিলভানিয়া এবং ফ্লোরিডার মতো শেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলোতে ভোটারদের মন জয় করতে পারেন এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হলেও জয় ছিনিয়ে নিতে পারেন, তাহলে তার হোয়াইট হাউসের মসনদে বসার জন্য ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

এসআইএস/পিআর