ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

করোনায় ভয়াবহ অক্সিজেন সংকট ভারতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৩৬ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে চলতি মাসে প্রায় প্রতিদিনই দৈনিক সংক্রমণ ছিল গড়ে ৯০ হাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অল্প কয়েকদিনেই লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলকে টপকে গেছে ভারত।

এদিকে, করোনা সংকট বাড়তে থাকায় নতুন আতঙ্ক হয়ে ধরা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। হাসপাতালগুলো রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে।

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের ভিওয়ান্ডি শহরে এসএস হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের মালিক অঙ্কিত সেঠিয়া। গত কয়েকদিন ধরেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। তার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন-রাত চেষ্টা করেও অক্সিজেন ঘাটতি মেটাতে পারছেন না তিনি।

হাসপাতালের চারটি ট্যাংকের মধ্যে মাত্র দু'টি ট্যাংক তরল অক্সিজেনে পূর্ণ। অথচ হাসপাতালের ৫০টি বেডের মধ্যে ৪৪টি বেডেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে অনেকেরই শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে।

অক্সিজেনের ট্যাংকগুলোও খুব বড় নয়। ফলে রোগীর চাপ থাকায় ৬ ঘণ্টার মধ্যেই ট্যাংক খালি হয়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে এই ট্যাংক খালি হতে ৯ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

অপরদিকে, যে দু'জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অঙ্কিত সেঠিয়া তার হাসপাতালের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করেন তারা দু'জনও এখন অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ফলে চরম খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে তাকে।

গত শুক্রবার রাতে অক্সিজেনের জন্য তিনি ১০ জন ব্যবসায়ী এবং আরও চার হাসপাতালের সঙ্গে যোগযোগ করেছেন। কিন্তু কারও কাছ থেকেই তিনি কোনো সহায়তা পাননি। তবুও তিনি দমে যাননি। বার বার চেষ্টা করার পর ১৮ মাইল দূরের একটি হাসপাতাল থেকে তিনি অক্সিজেনের ২০টি বড় সিলিন্ডার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সে সময় কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করেই এসব সিলিন্ডার আনা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় অঙ্কিত সেঠিয়া বলেন, এখন আমার কাছে আগামী ১২ ঘণ্টার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। যে কোনভাবেই একটু অক্সিজেন পাওয়ার জন্যই আমাদের এই লড়াই।

শুধু তিনি একা নন, ভারতের প্রায় সব হাসপাতালেই এখন অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। করোনায় আক্রান্ত অনেকরই অক্সিজেনের মাত্রা একেবারেই নিচে নেমে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে ভেন্টিলেটর সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

ভারতে প্রায় ৫শ ফ্যাক্টরিতে অক্সিজেন পরিশোধনের কাজ করা হয়। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় চিকিৎসাকাজে ব্যবহারের জন্য। বাকি অক্সিজেন মূলত বাণিজ্যিক, বিশেষ করে অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

করোনার কারণে দেশটিতে অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। চলতি মাসে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং কেয়ার সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৭শ টন অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়েছে। গত এপ্রিলে এই চাহিদা ছিল মাত্র ৭৫০ টন।

এছাড়া করোনার কারণে অনেক কারখানা এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকারও কারণেও অক্সিজেন সংকট বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এর মধ্যেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ আবারও শুরু হয়েছে।

করোনায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দাদের। কারণ এসব রাজ্যেই এখন পর্যন্ত সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ২৩৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৮০ হাজার ৮০৮ জন। অপরদিকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৯ জন।

টিটিএন/জেআইএম