বিনা ব্যথায় ভ্যাকসিন নেয়ার সুচ আবিষ্কার ভারতে
শরীরে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই ভয় থাকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের সুচটা। এটার মাধ্যমে টিকা নিতে ব্যথা সকলেই পেয়ে থাকেন। এ জন্য একদম অপারগ না হলে অনেকে ইনজেকশন নিতেই চান না। তবে ইনজেকশন সিরিঞ্জের বিকল্প হিসেবে প্রথমবারের মতো মাইক্রোনিডল (সুচ) আবিষ্কার করেছে ভারত।
এটি মানুষের চুলের চেয়েও সরু। এত সূক্ষ্ম মাইক্রোনিডল এর আগে ভারতে বানানো বানানো হয়নি। এর ফলে, ইনজেকশনের জন্য আর সিরিঞ্জ লাগবে না। আর ব্যথাহীনভাবে সেই মাইক্রোনিডলের মাধ্যমে যাতে ওষুধ ঠেলে শরীরে প্রবেশ করানো যায়, এর জন্য বানানো হলো মাইক্রোপাম্পও।
আক্ষরিক অর্থেই অভিনব এই দুটি উদ্ভাবন করেছে খড়গপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি)’ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’ এবং ‘আইইইই’-তে। গবেষণাটি হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায়।
ইনজেকশন নেয়ার ভয় দূর করতে গত কয়েক দশক ধরেই গবেষণা চলেছে আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশে। ‘পেইনলেস ইনজেকশন ডিভাইস’ আমেরিকাতে চালুও হয়েছে। চালু হয়েছে আরও কয়েকটি দেশে। ভারতেও গত কয়েক বছরে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তা সর্বজনীন করা সম্ভব হয়নি। ইনজেকশন দেয়ার প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি যন্ত্রণাহীন করাও সম্ভব হয়নি, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অপ্রতুলতায়।
খড়গপুরের আইআইটির গবেষকদের অভিনবত্ব এখানেই। তারা শুধুই যে সেই সূচের ব্যস অপ্রত্যাশিতভাবে কমিয়ে চুলের চেয়েও সরু করে তুলতে পেরেছেন, তাই নয়; সূচ যাতে পলকা না হয়, এর জন্য তার শক্তিও বাড়িয়ে দিতে পেরেছেন কয়েকগুন। ফলে ত্বকের নিচে ঢোকানোর সময় সেই সূচ ভেঙেও যাবে না।
মূল গবেষক খড়গপুর আইআইটির ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তরুণকান্তি ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘একটা চুলের চেয়েও সরু হওয়ায় এই মাইক্রোনিডল শরীরে ফোটানো হলে বিন্দুমাত্র যন্ত্রণা অনুভূত হবে না। কারণ, এই সুচ আকারে এতই ছোট আর সরু যে তা আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলোকে (‘নার্ভ’) ছুঁতেই পারবে না। আর সেগুলো খুব মজবুত করে বানাতে পেরেছি আমরা। তাই ত্বকের নিচে ঢোকানোর সময় সেই সুচ ভেঙেও যাবে না।’
তরুণ জানিয়েছেন, মাইক্রোনিডলগুলোর বাইরের ব্যস মাত্র ৫৫ মাইক্রোমিটার। আর ভেতরের ব্যস সাকুল্যে ৩৫ মাইক্রোমিটার। বাজারে চালু মাইক্রোনিডলগুলোর চেয়ে ৮ গুন মজবুত করে এই সূচগুলো বানানো হয়েছে। যার ‘স্টিফনেস’ প্রায় ৫ গুন (৪.৮ গুন)। ত্বকে ভেদন-শক্তি ৪১৮ গুন বেশি। ইলাস্টিকের (স্থিতিস্থাপক) মতো প্রয়োজনে নিজেকে বাঁকিয়ে নেয়ার ক্ষমতা বাজারে চালু মাইক্রোনিডলের চেয়ে ৩৬৩ গুন বেশি এই সূচের। এই সূচের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ০.০১২ মাইক্রোলিটার তরল শরীরে ঢোকানো যাবে। স্বর্ণের পাত বসানো যে মাইক্রোপাম্পটি বানানো হয়েছে, তার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৩০ মাইক্রোলিটার করে ওষুধ ঢুকিয়ে দেয়া যাবে মাইক্রোনিডলের মধ্যে থাকা ‘রিজার্ভার’-এ।
এফআর