ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন: কাজ করবে? কতটা নিরাপদ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:০৯ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় বিশেষ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। কারণ এই প্রতিযোগিতা চলছে কিছুটা তথাকথিত ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’র আদলে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশিরভাগ সময়ই ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

এর মাঝেই মঙ্গলবার বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে ব্যাপক শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, তারা স্পুটনিক-৫ নামের একটি কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিনের নিবন্ধন দিয়েছে। তৃতীয় ধাপের ব্যাপক পরিসরের সুরক্ষা পরীক্ষার ফল আসার আগেই এই ভ্যাকসিনটি গণ-উৎপাদন এবং ধাপে ধাপে গণহারে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া; এই কাজে সাধারণত দীর্ঘ সময়ের দরকার হয়।

বিশ্বজুড়ে মহামারি পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মধ্যে যেকোন একটি ভ্যাকসিনকে সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে এক চিলতে আলো মনে হতে পারে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

কিন্তু বাস্তবতা হলো- কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সব ভ্যাকসিন এক নয়।

কিছু মৌসুমি ফ্লু ভ্যাকসিন যে ধরনের সুরক্ষা দেয় তাকে চিকিৎসাব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমন- ১৯৫০ এর দশকে জোনাস সলকের তৈরি পোলিও ভ্যাকসিন। পোলিওর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হলেও এই ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিসরে প্রয়োগের জন্যও অনেক সময় লেগেছিল।

রাশিয়ার কর্মকর্তাদের প্রায়ই নানা ধরনের দাবি করতে দেখা যায়। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করলেও রাশিয়াকে কাঠগড়ায় তুলছেন অনেকেই। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ভ্যাকসিনের অগ্রগতির ব্যাপারে যে দাবি করা হয়েছে, এর আসল প্রতিশ্রুতি যাই হোক না কেন; বিশেষজ্ঞদের মতে- অসচ্ছতা এবং বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড বিবেচনায় এই ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি

রাশিয়ার এসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অর্গানাইজেশন গত মে মাসের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল চালায়। সেই সময় ভ্যাকসিনটির আবিষ্কারক সংস্থা মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের প্রধান বলেছিলেন, তিনি এবং তার সহকর্মীরা ভ্যাকসিনটির প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক চাপের মুখে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিয়মনীতির মারাত্মক লঙ্ঘন করেই তারা প্রাথমিক পরীক্ষা চালিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

সেনাবাহিনীসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা নিয়ে বেশকিছু নীতিগত প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য অথবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও উঠছে এখন।

বর্তমানে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, সেটি হলো তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না করেই ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদনের প্রস্তুতি। ঝুঁকিপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কার্যকারিতা জানার জন্য ব্যাপকসংখ্যক নমুনার ওপর শেষ ধাপের এ পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাশিয়া এই ধাপ এখনও সম্পন্নই করতে পারেনি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- রাশিয়ার এই ভ্যাকসিন কেমন উপকারী হবে; সে ব্যাপারে খুবই কম জানা গেছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে; তা কমপক্ষে দুই বছর শরীরে টিকে থাকবে। যদিও তাদের এ দাবির ব্যাপারে শক্ত প্রমাণের অভাব রয়েছে। তারা এখনও ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলও প্রকাশ করেননি।

এছাড়া সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে এটা কতটা সুরক্ষা দেবে সেটিও পরিষ্কার নয়। তবে ঝুঁকি হলো- আংশিক কার্যকর একটি ভ্যাকসিন সরকার এবং জনগণকে মিথ্যা আশা দেবে যে, মহামারি শেষের পথে। শুধু তাই নয়, এর ফলে করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাও প্রত্যাহার করে নেয়ার পথে পরিচালিত করতে পারে।

কয়েক যুগের চেষ্টাতেও এইচআইভির ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়ার সঙ্গে কোভিড-১৯ এর প্রথম ভ্যাকসিনের তুলনা করে ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কিন্চ ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমাদের খুব ভালো ভ্যাকসিন না পাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার ধারণা করোনার প্রথম প্রজন্মের ভ্যাকসিনগুলো মাঝারি মাত্রার হতে পারে। তারপর সুরক্ষা বিবেচনায় এটি সঠিক হওয়ার বিষয়ও রয়েছে।

নিউ হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, একটি খারাপ ভ্যাকসিন পরিশেষে মানুষকে সহায়তার পরিবর্তে তাদেরকে প্রকৃত কার্যকর ভ্যাকসিন গ্রহণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলতে পারে। বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করা হলে সেটি সর্বত্র ভ্যাকসিন সুরক্ষার ধারণায় আঘাত করবে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার ভ্যাকসিনের সমস্যা হলো এটি যেভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে তা জনসাধারণের বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করবে। এমনকি এই ভ্যাকসিন যদি কাজও করে, তারপরও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটি ব্যাপকভাবে নেয়ার সম্ভাবনা নেই। অনিরাপদ হওয়ার শঙ্কা বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনবিরোধী আন্দোলনও উসকে দিতে পারে। কারণ ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে ইতোমধ্যে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারিত হয়েছে; সেই বিশ্বাস আরও জোরাল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এসআইএস/এমএস