মিয়ানমারের নির্বাচনে কালো ছায়া
মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী নভেম্বরে। এ নির্বাচনে দেশটির নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিও (এনএলডি) অংশ নিচ্ছে। এছাড়া এ নির্বাচনে অংশ নিতে অন্তত ৯০ টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছে। তবে কোনো দল থেকে মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এনএলডির জ্যেষ্ঠ এক নেতার বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া এনএলডির ওই নেতার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের মুসলিমবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় সু চি কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় নেত্রীর নির্দেশেই দল থেকে মুসলিমদের কাটছাঁটও করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের প্রধান বিরোধী দল এনএলডির আঞ্চলিক এবং জাতীয় এক হাজার ১৫১ প্রার্থীর মধ্যে কোনো মুসলিম প্রার্থী নেই। যদিও দেশটিতে অন্তত ৫০ লাখ মুসলিম বসবাস করছে। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ থেকে ১০ ভাগ।
উল্লেখ্য,মিয়ানমারে গত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে মুসলিমদেরকে বাইরে রাখা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন কমিশন মুসলিম প্রার্থীদের বাবা-মা দেশটির নাগরিক নয় এমন অভিযোগ তুলে মনোনয়ন বাতিল করেছে।
এনএলডির ওই নেতা আরো বলেন, আমার মনে হয় সু চি দেশটির কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের সংগঠন মা বা থার(যা অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজন নামে পরিচিত) বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। এ কারণেই সেখানে মুসলিমদের কাটছাঁট করা হচ্ছে। এই সংগঠনটির সদস্যরা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হামলার জন্য বেশি আলোচিত। তবে একটি দলে বিভিন্ন ধরনের ও ধর্মের মানুষ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিয়ানমারে কয়েক দশকের সহিংসতা থেকে গণতন্ত্রের ধারা ফিরিয়ে আনতে লড়াই করছেন সু চি। ৭০ বছর বয়সী এনএলডির এই নেত্রী ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তবে নির্বাচনে মুসলিমদের বিরত রাখার এ কৌশলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
এনএলডির নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ক উইন তেইন বলেন, নির্বাচনে যার বেশি জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মুসলিমরা এ সিদ্ধান্তের বাইরে।
মানবাধিকার গবেষক ড্যাভিড ম্যাথেইসন রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বাচনের বাইরে রেখে দেশটিতে নির্বাচন আদৌও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
গত মাসে তিনি এক প্রতিবেদনে জানান, দেশটির জাতীয় নির্বাচনে কালো ছায়া রাখতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সেনা সমর্থিত সরকার। বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই চলছে। নির্বাচনে এসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া দেশটির ভোটাররা জানেন না কাকে ভোট দেয়া উচিত। তবে শুধুমাত্র মুসলিমরা নয়, অধিকাংশ ভোটারের অপছন্দের তালিকায় রয়েছে ক্ষমতাসীন ইউএসডিপি।
এসআইএস/এএইচ/আরআইপি