আজ বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করছেন মোদি
ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোদ্ধায় বহুল আলোচিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার আরও পরের দিকে হিন্দুদের দেবতা রামের নামে নির্মাণাধীন এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
অযোদ্ধার বিতর্কিত এই স্থান নিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে; উভয় সম্প্রদায়ই স্থানটির মালিকানা দাবি করে। ষোড়শ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদে ১৯৯২ সালে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তারা বলছেন, এটা মূলত তাদের অন্যতম শ্রদ্ধেয় দেবতা রামের মন্দির ছিল।
কয়েক দশকের বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের পর গত বছর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট অযোদ্ধার বিতর্কিত এই স্থানের মালিকানা হিন্দুদের বলে রায় দেন। এছাড়া মসজিদ নির্মাণ করার জন্য শহরের অন্য একটি এলাকায় মুসলিমদের ভূমি দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোদ্ধার রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন আজ। তিনি এই মন্দিরের স্থানে রূপার তৈরি ইট স্থাপনের মাধ্যমে এই কাজের উদ্বোধন করবেন।
মোদির মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের এই দৃশ্য পুরো অযোদ্ধার বিভিন্ন প্রান্তে বিশাল স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এ সময় উত্তরপ্রদেশের হাজার হাজার রামভক্ত উপস্থিত থেকে মন্দিরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী দেখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতি মুহূর্তে এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করবে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সোনা, রূপার ইট, মুদ্রা ও বারে রাম মন্দিরের ভিত্তি
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মন্দিরের নির্মাণকাজে ব্যবহার করার জন্য সারা দেশ থেকে রাম ভক্তরা রূপা ও সোনার মুদ্রা, বার এবং ইট তৈরি করে পাঠিয়েছেন। এসব মূল্যবান ধাতব মুদ্রা পাহাড়া দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, গত কয়েক বছর ধরে ভক্তদের পাঠানো দেবতা ‘শ্রী রাম’র নাম খোদাইকৃত ২ লাখের বেশি ইট মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ব্যবহার করা হবে। প্রস্তাবিত মন্দিরের প্রধান নকশাকারী চন্দ্রকান্ত সম্পুরা দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে বলেছেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলের জনপ্রিয় ধাঁচের মন্দির নির্মাণ শৈলী নাগারার অনুকরণে মন্দিরের কাঠামো নকশা করা হয়েছে।
মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রাথমিকভাবে দেবতাদের মূর্তি রাখা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে থাকবে বিশালাকারের তিনটি মেঝে। পাঁচটি গম্বুজ ও ৩৬৬টি স্তম্ভের ওপর গড়ে ওঠবে এই স্থাপনা।
সম্পুরা বলেন, মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন; তাদের সম্মানে একটি স্মৃতি প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।
বিতর্কের আদ্যোপান্ত
অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একর বিতর্কিত জমির আইনি লড়াইয়ের শুরু হয় ১৯৫০ সালে। রামের ভক্ত গোপাল সিংহ বিশারদ বাবরি মসজিদকেই রামের জন্মভূমি দাবি করে সেখানে পূজার অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।
পরমহংস রামচন্দ্র দাস সেখানে পূজার দাবি জানিয়ে মামলা করেন। ১৯৬১ সালে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জমির অধিকার চেয়ে আদালতে যায়। ‘রামলালা বিরাজমান’ নিজেও মামলার পক্ষ হয়ে ওঠেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি দেবকীনন্দন আগারওয়ালের প্রধান দাবি, রামের জন্মভূমিই দেবতার চরিত্র পেয়েছে।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সব মামলা এলাহাবাদ হাইকোর্টে চলে আসে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়া হোক। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ।
এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। রামলালা বিরাজমানের আইনজীবীরা দাবি করেন, রামের জন্মভূমি দেবতা-স্বরূপ। তার ভাগ হয় না। বিতর্কিত জমি মন্দিরের জন্য দেয়ার রায় ব্যাখ্যা করে গত বছরের ৯ নভেম্বর দেশটির সুপ্রিমকোর্ট বলেন, আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া প্রমাণ পেয়েছে যে, মোঘল সম্রাট বাবরের ১৬ শতকের মসজিদ ফাঁকা জায়গায় নির্মাণ করা হয়নি।
দেবতা রামচন্দ্রের জম্মভূমির ওপর তৈরি করা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের। ১৯৯২ সালে হামলা চালিয়ে এই মসজিদ ধ্বংস করার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যান।
মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিলেও ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে আইনের পরপন্থী বলে রায়ে বলেছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
এসআইএস/পিআর